ডেঙ্গু নিয়ে কোনো রকম অবহেলা নয়, তার মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবে স্বস্তির খবর এই যে সরকার এ ব্যাপরে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি মওসুমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকির জন্য দশটি টিম গঠন করেছে সরকার। গত সোমবার এক জরুরি সভায় এসব টিম গঠনের কথা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় চারটি টিম এবং উত্তর সিটির জন্য তিনটি টিম কাজ করবে। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের জন্য গঠন করা হয়েছে একটি টিম। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ পৌরসভা যেমন– সাভার, দোহার, তারাব, রূপগঞ্জ এবং অন্যান্য পৌরসভার জন্য আরও একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার কাজের সমন্বয় ও তথ্য সংগ্রহের জন্য সাত সদস্যের আরেকটি টিম কাজ করবে। এদিকে চট্টগ্রামে আরও ৩৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে সংবাদে জানানো হয়েছে। প্রতি টিমে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে প্রধান করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনটি ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব এলাকা পরিদর্শন করে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম তদারকি করবেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্য সংগ্রহ কমিটির কাছে নিয়মিতভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপ এবং অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদন দিতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নেওয়া পদক্ষেপ এবং অভিযান পরিচালনার প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইট, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ডেঙ্গুর প্রকোপ ততটা মারাত্মক না থাকলেও বর্ষা মৌসুমের শেষে এসে এডিস মশাবাহিত এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভাঙা রাস্তা ঘাট, ডোবা ব্যাম্ব ষ্ট্রাম্ফ, লিফ এক্সইল, গাছের ছিদ্র প্রভৃতি প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর বিস্তৃতি যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, একই তালে এডিস মশার ট্রান্সমিশন হচ্ছেও সমান তালে। তাই বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে মানুষের জন্য এক অকল্পনীয় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে। এ বছরের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বিশ্লেষণে চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশন ছাড়া) সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক। আবার ডেঙ্গুর চিকিৎসাও এক ভয়ানক অর্থনীতির বিপর্যয় বয়ে আনবে। সব মিলিয়ে এক অশনি সংকেত চলছে দক্ষিণ অঞ্চলসহ সারাদেশে। এখন এই চরম দুর্ভোগ মোকাবেলায় আমাদের কী করণীয়–তা নির্ধারণ করতে হবে।
তাঁরা জানান, ডেঙ্গু মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার বাস্তবায়ন দরকার। মশাবাহিত এই রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে নানামুখী যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছে সচেতনতা তৈরিতে (অ্যাওয়ারনেস) ক্যাম্পেইন, মশার বংশবিস্তারের স্থান নির্মূল ও লার্ভা নিধন। তাছাড়া বয়স ও এলাকা ভিত্তিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী এবং এতে মৃত্যুর তথ্য শ্রেণিবিন্যাস করা দরকার। দেশজুড়ে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য সব হাসপাতালে আগে থেকেই আলাদা ইউনিট করা হয়েছে।
গুরুতর এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি। বিশেষজ্ঞগণ ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বিত জাতীয় কৌশলের কথা ভাবতে পারেন। যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি জোরালো কমিউনিটিকেন্দ্রিক ডেঙ্গু নজরদারির ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া জরুরি, যার আওতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা যাবে। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বংশবিস্তারের স্থান নির্মূলে কমিউনিটির নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণও ডেঙ্গু সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় সমন্বিত ও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চসিকের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলেও এককভাবে ডেঙ্গুর মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। সে কারণে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।