ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ছাড়া পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব নয়

| বৃহস্পতিবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেই স্বীকার করেছেন ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে ডা. মিলন অডিটোরিয়ামে ‘ডেঙ্গু ড্রপস’ অ্যাপের উদ্বোধনকালে তিনি এ উদ্বেগের কথা জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে গত দুএক দিনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেড়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। এটি সত্যিই উদ্বেগজনক। মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এ রোগ থেকে নিস্তার মিলবে না। তবে তিনি এটাও বলেন, বাংলাদেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে, ডেঙ্গুও পারবে। তবে মশা নির্মূল করতে হবে। মশা বাড়লে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়বে। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আশপাশ পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের কোনো ঘাটতি নেই। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ডেঙ্গু চিকিৎসায় অগ্রগতি লাভ করেছে। ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ চিকিৎসার গাইডলাইন তৈরির পাশাপাশি চিকিৎসকনার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে মশা না কমলে ডেঙ্গু রোগীও কমবে না।

দেশে নীরব ঘাতক এই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। এ কারণে ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু।

বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ আর এই রোগের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার পরেও সেদিকে নজর না দেয়ায় এই বছরে ডেঙ্গু মারাত্মক হয়ে উঠেছে বলে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, এক সময়ে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগটি মৌসুমী রোগ বলে মনে করা হলেও, গত কয়েক বছর ধরে সারা বছর জুড়ে প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এর ফলে এই রোগের চার ধরনের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং রোগটি দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এমিরেটস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ইতোপূর্বে বলেছিলেন, অযথা কথা বলে লাভ নেই, মশা মারার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু মশা মারার সঠিক পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা এখনো গ্রহণ করা হয়নি। বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি পদ্ধতি প্রয়োগ করে ধাপে ধাপে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ এখনই হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সামনে বিপদ। তাই রোগী যাতে আর না বাড়ে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এটার সমাধান সম্ভব না। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর অন্য রোগব্যাধিতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। তাই জ্বর হলে বিলম্ব না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, একজনকে বলতে শুনলাম ডেঙ্গু নাকি নিয়ন্ত্রণে। এটা ঠিক না। এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে মনে হলেও হঠাৎ আবার দ্রুত বাড়বে। কারণ দেশে এডিস মশা আছে। তাই নিয়ন্ত্রণে বলা যাবে না। আগে ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল ডেঙ্গু। কিন্তু এখন সারা দেশে সমান হারে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। তাই গায়ের জোরে কথা বলা যাবে না। মশা মারার সঠিক নীতিমালা লাগবে। কিন্তু সেই নীতিমালা নেই। মনে রাখতে হবে পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিন ডেঙ্গু থাকবে। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি পদ্ধতি প্রয়োগ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। গবেষণা ও পর্যালোচনা করে স্থায়ীভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নইলে দিনদিন সমস্যা বাড়তেই থাকবে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে। এই তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, সচিব ও অন্য কর্মকর্তারা কি একবারের জন্যও একটি যৌথ সভায় বসার প্রয়োজন বোধ করেছেন? যদি না করে থাকেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে অদক্ষতা ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ অবশ্যই উঠবে’।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ থেকে আরও ভয়াবহ হবে। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতির এতই অবনতি হবে যে, আগামীতে তা সামাল দেওয়া যাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে