ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতা প্রয়োজন

| সোমবার , ১০ জুলাই, ২০২৩ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। জ্বর হলেই সবাইকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে কীটতত্ত্ববিদরা বলেন, ‘এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। প্রকৃতি রক্ষা না করলে আর জনগণ সচেতন না হলে সিটি করপোরেশনের পক্ষে রোগটি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

কিন্তু হাসপাতালে কতটা সেবা তাঁরা পাচ্ছেন? ৮ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নরমাল স্যালাইনও কিনতে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। এতে বলা হয়, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা বলতে জ্বর থাকলে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়ানোর কথা বলছেন চিকিৎসকরা। আর রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রেখে তরল জাতীয় খাবারের পাশাপাশি নরমাল স্যালাইন দেয়ার প্রেসক্রাইব করে থাকেন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মাঝেও বিশেষ করে গরীব ও নিম্নবিত্ত পর্যায়ের রোগীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা নেন। তবে গরীবের চিকিৎসা সেবায় ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতালে বিনামূল্যের প্যারাসিটামল মিললেও নরমাল স্যালাইন পাচ্ছেন না ডেঙ্গু রোগীরা। বাইরের দোকান থেকেই এই স্যালাইন (নরমাল) কিনতে হচ্ছে রোগীদের। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালের এমন একাধিক ওয়ার্ড সরেজমিনে ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কিছুটা সংকট থাকলেও হাসপাতালের স্টোরে নরমাল স্যালাইন রয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। স্টোরে থাকার পরও ডেঙ্গু রোগীদের নরমাল স্যালাইন সরবরাহ না করার বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার কথা জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের তিনটি ওয়ার্ডে (ওয়ার্ড নং১৩, ১৪ ও ১৬) এবং শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের দুটি ওয়ার্ডে (৮ ও ৯) ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এসব ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্নার করে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মেডিসিনের ওয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা যায়ওয়ার্ডের মধ্যেই সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি বেড দেয়া হয়েছে ডেঙ্গু রোগীদের। বিছানার সাথে লাগোয়া মশারি থাকায় সহজেই এই রোগীদের (ডেঙ্গু) শনাক্ত করা যাচ্ছে। কমবেশি সব রোগীর বেডের পাশে থাকা স্ট্যান্ডেই স্যালাইন ঝুলানো। বেশির ভাগের হাতেই স্যালাইন পুশ করার ক্যানুলা। তবে মশারির ভিতর থাকার কথা বলা হলেও অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগীকে মশারি তুলে রাখতে দেখা যায়। রোগীরা মশারির ভিতর থাকছেন কী না, সে দিকে যেন কারও ভ্রুক্ষেপও নেই। যদিও কয়েকজন রোগীকে মশারির ভিতর দেখা গেছে।

খবরটা খুবই দুঃখজনক। শুধু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল নয়, অধিকাংশ হাসপাতালেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনার অভাবে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে,‘এখনো অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের মশারির ব্যবহার নিশ্চিত করানো যাচ্ছে না। ডেঙ্গুর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অন্যান্য রোগীর সঙ্গে থেকে। সুস্থতাপরবর্তী জটিলতা নিরসনে পোস্ট ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া ক্লিনিকও চালু করা হয়নি। অনেক হাসপাতাল আঙিনায় নিয়মিত মশকনিধন কার্যক্রম ও পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। এ বাস্তবতায় রোগীরা তো বটেই, জনস্বাস্থ্যবিদরাও হাসপাতালের সেবাদান ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।’

ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবার ভয়াবহ হতে পারে বলে বছরের শুরুতেই সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। এরপরেও যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় বর্তমানে সারা দেশেই ডেঙ্গু রোগী ব্যাপক সংখ্যায় বাড়ছে বলে জানান তারা। কীটতত্ত্ববিদরা বলেন, ‘এ বছর ডেঙ্গু বাড়বে এটা আমরা মার্চেই বলেছিলাম। জেলা শহরগুলোতে রোগী এ বছর বেশি। এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা কিন্তু একদিনে এই অবস্থায় আসিনি। সারা বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। দেশে ডেঙ্গু স্থায়ী হতে যাচ্ছে।’

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। এরা ড্রোন দিয়ে এডিস মশার লার্ভা খুঁজছে। এই অবস্থায় চট্টগ্রামের ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছেতা অনুমান করা কঠিন। তবে চমেক হাসপাতালের মতো হাসপাতালে রোগীরা নরমাল স্যালাইন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় গাফেলতি কাম্য নয়, বরং সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে