ডেঙ্গুর যেসব উপসর্গ দেখলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৪ জুলাই, ২০২৩ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এমন কিছু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে যা ডেঙ্গুর প্রথাগত উপসর্গ নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু হয়েছে সেটি বুঝতে না পারার কারণে হাসপাতালে যেতে দেরি করছেন রোগীরা। ফলে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে গেলেও অনেকে মারা যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫০ জন। এদের ৮০ শতাংশই হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে তিন দিনের মধ্যে মারা গেছেন। শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে যাওয়াটাই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর একটি বড় কারণ।

চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু মৌসুম চলতে থাকায় বর্তমান সময়ে যে কারো শরীরে অস্বাভাবিক কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো উচিত।

সাধারণত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীর ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এবার এ ধরনের উপসর্গ নিয়েও রোগীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন। তবে এদের সংখ্যা কম। এর তুলনায় এবার হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের মধ্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা বেশি। খবর বিবিসি বাংলার।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ নিয়াতুজ্জামান বলেন, তারা হয়তো আগে একটি ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছিল। এখন তারা হয়তো অন্য একটি ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত। ফলে যে উপসর্গগুলো নিয়ে তারা আসছেন সেগুলো প্রথাগত ডেঙ্গু উপসর্গের মতো নয়। একে বলা হচ্ছে কমপ্লিকেটেড ডেঙ্গু সিনড্রোম বা এঙটেনডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম। এই উপসর্গগুলো অবহেলা করার সুযোগ নেই।

পরিবর্তিত উপসর্গ

দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া : তিন দিন বা চার দিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছেন কিন্তু সেটি ভালো হচ্ছে না। এমন উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। বর্তমানে ডেঙ্গুর নতুন যেসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে এটাই বেশ উল্লেখযোগ্য। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর যে ডায়রিয়া হয় তার সাথে সাধারণ ডায়রিয়ার কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। যে কারণে ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

জ্বর না থাকা : হাসপাতালে এমন সব ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন যারা এ মৌসুমে জ্বরে আক্রান্তই হননি। অর্থাৎ জ্বর না হলেও পরীক্ষার পর তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত বলে জানা গেছে। এছাড়া গরমের কারণে অনেকে হয়তো দুয়েক দিন হালকা জ্বরে ভুগেছেন, কিন্তু সেটি পাত্তা দেননি। কিন্তু পরে সেটি মারাত্মক ডেঙ্গুতে পরিণত হয়েছে।

স্থায়ী বমি : কয়েক দিন জ্বর হওয়ার পর বমি শুরু হয় এবং একবার বমি শুরু হলে সেটি আর কমে না।

প্রচণ্ড মস্তিস্কে প্রদাহ : এই লক্ষণ অনেকটা মেনিনজাইটিসের সমস্যার মতো। এতে প্রচণ্ড মাথাব্যথা দেখা দেয়। অল্প জ্বরের পর কারো যদি প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, হাতপা শক্ত হয়ে যায় কিংবা প্রচণ্ড খিঁচুনি দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো উচিত। এছাড়া যেকোনো ধরনের মাথার প্রদাহ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

হাতপা ফুলে যাওয়া : শরীরের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে বুকে এবং পেটে যদি পানি জমে যায়, তাহলে দেরি না করে হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই লক্ষণটি এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া আছে অসহ্য রকমের পেট ব্যথা।

নিয়াতুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গুর এসব পরিবর্তিত উপসর্গ একটি একটি করেও আসতে পারে। আবার বেশ কয়েকটি উপসর্গ এক সাথেও দেখা দিতে পারে। এটা নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর বা ডেঙ্গু কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটির উপর।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুর মোট তিনটি পর্যায় আছে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে ফেব্রিল ফেইজ বা জ্বর পর্যায়, দ্বিতীয়টি হচ্ছে ক্রিটিক্যাল ফেইজ বা গুরুতর পর্যায় এবং তৃতীয়টি হচ্ছে কনভালেসেন্ট ফেইজ বা নিরাময় পর্যায়।

এ ধরনের উপসর্গ থাকা রোগীদের ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনৌকার টিকিট পেলেন মহিউদ্দিন বাচ্চু
পরবর্তী নিবন্ধনিষিদ্ধ, তবুও চলে দুই শতাধিক ভলগেট