চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে চট্টগ্রাম নগরীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৫১ জন এবং উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ জন। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। অর্থাৎ শুধু সেপ্টেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা প্রথম ৮ মাসকে ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে গতকাল রোববার পর্যন্ত নগর ও উপজেলায় মোট ৮২৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নগরে ৪৬৭ এবং উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬১ জন। গতকাল সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪৮৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয় ১ জনের। সব মিলিয়ে চলতি বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৭৫ জন। এ নিয়ে চলতি বছর সারা দেশে ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫২ জন, নারী ২১২ জন এবং ১৬৪ জন শিশু আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে ২ জন পুরুষ, ৭ জন নারী এবং ২ জন শিশু ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এদিকে গতকাল নতুন করে আরো ২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এবং এক নারী মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে, ২ জন সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে, ৪ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ১ জন চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ও ৮ জন নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এছাড়া গতকাল চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেরিনা আক্তার মুক্তা (৪৬) নামে এক নারী মারা গেছেন। নগরীর বায়েজিদ এলাকা থেকে তাকে স্বজনরা গত শনিবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান। এর আগে এনএসওয়ান এন্টিজেন পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। ভর্তির দিন শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিন্ড্রোম (এআরডিএস) এবং হাইপোভোলেমিক শক এঙপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমে ও হাইপারটেনশনে মুক্তার মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকরা তার মৃত্যুসনদে উল্লেখ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিভিন্ন জায়গায় স্বচ্ছ পানি জমছে। বিশেষ করে ফুলের টব ও ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ারসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত বস্তুতে পানি জমার কারণে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা প্রজননে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীও বাড়ছে। তাই সবাইকে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখাসহ কোথাও যাতে তিন দিনের বেশি পানি না জমে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়া দিনের বেলায়ও মশারি টাঙাতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সবগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে আমরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধের মজুদ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ভর্তি হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮৭ জন। এর মধ্যে মারা যান ১০৭ জন। এছাড়া ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জন। ২০২১ সালে আক্রান্ত হন ২২১ জন, মারা যান ৫ জন রোগী।