টানা চারদিনের প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে পানির নিচে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিল। ডুবে গেছে আমন ধানের ক্ষেত ও বীজতলা। আর তিনদিন এভাবে পানির নিচে ডুবে থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে ক্ষেত। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী–আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। ফলে নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন গুমাইবিলের সাড়ে তিন হাজার কৃষক।
জানা যায়, আষাঢ় মাসে আমন চাষ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি না হওয়ায় পানি সংকটে যথাসময়ে আমন চারা রোপণ করা সম্ভব হয়নি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জমিতে সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে চাষাবাদ শুরু করার পর গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে গুমাইবিল প্লাবিত হয়েছে। এবার গুমাইবিলের ৩৫০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। ইতোমধ্যে ১৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছেন বিলের অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কৃষক। যাদের প্রতি হেক্টর জমি আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা করে। এই হিসেবে সাড়ে ১০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে রোপণ করা চারার মধ্যে অর্ধেকই ব্রীধান–৫১ জাতের। যেগুলো ১৫ দিন পর্যন্ত পানির নিচে থাকলেও ক্ষতি হয় না। এতে কিছুটা আশাবাদী কৃষক।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির পর বিশালাকৃতির ডোবার রূপ নিয়েছে এই শস্যভাণ্ডার। অন্তত চারফুট পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে গুমাইবিলে। এ সময় কথা হয় কৃষক নূর উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, এবার প্রায় ৭ হেক্টর (৪০ কানি) জমিতে তিনি চাষাবাদ করেছেন। এতে তার প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পানিতে ডুবে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তিনি। তবে আশার কথা হলো তিনি প্রায় ৫ হেক্টর জমির মধ্যে ব্রীধান–৫১ জাতের আবাদ করায় কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন। মোহাম্মদ মোকাররম নামে অন্য এক কৃষক বলেন, তিনি নতুন করে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন। যদি তার আবাদ নষ্ট হয়ে যায়, সেখান থেকে রোপণ করতে পারবেন। নষ্ট না হলেও অন্য কৃষককে তিনি সহায়তা করতে পারবেন।
গুমাইবিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলে গুমাইবিলের বিভিন্ন স্লুইস গেটের সবগুলো ধাপ খুলে দিয়েছি। যাতে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হতে পারে। তাছাড়া অধিকাংশ কৃষক ব্রীধান–৫১ জাত করায় আমরা আশাবাদী। তারপরও আমরা কৃষকদের এখন থেকেই নতুন করে বীজতলা তৈরির পরামর্শ দিচ্ছি। এক্ষেত্রে কৃষকদের দাপোগ পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। এই পদ্ধতিতে নিজ উঠান কিংবা যেকোনো খালি স্থানে পলিথিন কিংবা কলাগাছের বাকল বিছিয়ে অঙ্কুরিত বীজ প্রতি বর্গমিটারে ২/৩ কেজি হারে ঘন করে ছিটিয়ে দেবে। এরপর দুই–তিন পর্যন্ত পানি দিতে হবে। এসব বীজ ১২/১৫ দিনের মধ্যে রোপণের উপযোগী হয়ে যাবে। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত প্রতি বর্গমিটারের চারা দিয়ে এক বিঘা জমি রোপণ করা যাবে।












