বাঁশখালীতে পাহাড়ী ঢল ও প্রবল বর্ষণের ফলে বেশ কিছু কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ এবং পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার ৮০ শতাংশ কৃষিজ জমি পানিতে ডুবে যায়। শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে এ টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত উপজেলার সাধনপুর, কালীপুর, বৈলছড়ি, জলদি, শীলকূপ, চাম্বল, পুঁইছড়ি এলাকায় পাহাড়ি ঢলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও তলিয়েগেছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এলাকার লোকজন। এদিকে পুঁইছড়িতে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে ও সাধনপুরে কাঁচাঘর এবং দোকান ভেঙে দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতের নাম নোহান (১১), সে পানিতে ডুবে মারা যায় বলে স্থানীয় চেয়ারম্যান তারেকুর রহমান জানান। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের, পুকুর ও রাস্তাঘাট ডুবে যায়। জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে অনেক এলাকায় পানিবন্দি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে এম সালাহউদ্দিন কামাল জানান, ভারী বর্ষণে ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ৬নং ওয়ার্ড মাস্টার পাড়ায় একটি মাটির ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে মাটি চাপায় ২টি ছাগল এবং হাঁস–মুরগি মারা গেছে। এ সময় ভূপতি দে কালু (৫০)ও তার স্ত্রী জয়শ্রী দে (৪০) গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়া কৃষি জমি ও অধিকাংশ পুকুরসমূহ পানিতে ডুবে গেছে। বৈলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, অতিবৃষ্টিতে বৈলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের অফিসসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে অধিকাংশ সড়ক ও মানুষের বসতঘর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির ফলে উপজেলার সাধনপুর, কালীপুরের গুণাগরী পয়েন্ট ও বৈলছড়ি বাজারের উত্তর পাশে বাঁশখালীর প্রধান সড়ক টপকে গিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হয়। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তলিয়ে যায় পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের চলাচলের সড়কগুলো। পাশাপাশি মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি প্রবেশ করে।
পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ মাছের প্রজেক্ট ও পুকুর ডুবে গিয়ে পানির সাথে বিলীন হয়ে পড়ে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। স্থানীয়রা জানান, রাতভর টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়ী ঢলের পানি বাঁশখালী প্রধান সড়কের সাধনপুর ও কালীপুরে টপকে যায়। কালীপুরস্থ মাওলানা নাছির উদ্দিন জানান, টানাবর্ষণে আমাদের কালীপুর–বৈলছড়ি আজিজিয়া জামেয়া মিল্লিয়া কাছেমুল উলুম মাদরাসার পুকুর ডুবে যায়, মাদরাসার শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে শিক্ষার্থীদের বইপত্র ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ভিজে নষ্ট হয়। আব্দুল মান্নান নামে একজন বলেন, গতকাল শনিবার সকালে জলদি মিয়ার বাজারে এলে দেখি কাঁচাবাজার পানির তলে। অভ্যন্তরীণ সড়কটিও পানিতে ডুবে যায়। বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলের চাম্বল, পুঁইছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজ জমি, মৎস্য প্রজেক্ট, পুকুর ডুবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। বাঁশখালী উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু সালেক জানান, শুক্রবার রাত থেকে টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ৮০ শতাংশ কৃষিজ জমি পানির নীচে তলিয়ে যায়। কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানা যাবে দুয়েকদিন পর। পাহাড়ি ছড়াগুলো অবমুক্ত থাকলে এ ক্ষয়ক্ষতি হতো না বলে জানান তিনি।