ডিসেম্বরের মধ্যে এনসিটি, লালদিয়ার চর ও বে টার্মিনালে অপারেটর নিয়োগ

চট্টগ্রামে বিডা চেয়ারম্যান বন্দরে এজেন্ট ডেস্ক, ভেহিক্যাল ও কন্টেনার ডিজিটাল ডাটা এক্সচেঞ্জ সিস্টেম উদ্বোধন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১১ আগস্ট, ২০২৫ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, লালদিয়ার চর ও বে টার্মিনালে প্রথম অপারেটর নিয়োগ দিয়ে যেতে চায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। গতকাল রোববার বিকালে চট্টগ্রাম বন্দরের চার নম্বর জেটি গেটে এজেন্ট ডেস্ক এবং সিপিএআর গেটে ভেহিক্যাল ও কন্টেনার ডিজিটাল ডাটা এক্সচেঞ্জ সিস্টেমের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান। এ সময় বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিডার চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের মধ্যেই বন্দর নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বন্দরে যে প্রকল্পগুলো আছে সেগুলো আমরা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করব। আমাদের অ্যাম্বিশন হচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের বড় পোর্ট যেগুলো আছে, সেগুলোর মাইলস্টোন কিছু প্রোগ্রেস করে দিয়ে যেতে চাই। কিছু এগ্রিমেন্ট সাইন করে দিয়ে যেতে চাই। ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারিংয়ের প্রসেস চলছে। আমাদের ইচ্ছা আছে, এ বছরের শেষ নাগাদ এনসিটি, বে টার্মিনাল, লালদিয়া তিনটার ক্ষেত্রে এটলিস্ট প্রথম অপারেটরটাকে (সর্বোচ্চ দরদাতা) অ্যাপয়েন্ট করে দিয়ে যাওয়া।

সফটওয়্যার উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা একটা ফ্যান্টাস্টিক ইনিশিয়েটিভ। সবকিছু অটোমেটেড হয়ে যাবে। অটোমেটেড হওয়ার দুইটা সুবিধা আছে। প্রথম সুবিধা হলো, যে কাজটি করতে দুই দিন থেকে এক সপ্তাহ লেগে যেত, সশরীরে অফিসে যেতে হতো, সেটি এখন একটা বাটন ক্লিক করে ঘরে বসে করতে পারবে। সুতরাং সময় সিগনিফিকেন্টলি কমে আসছে। একই সাথে আমরা যে অভিযোগটা অনেকের কাছ থেকে পাই, সেটা হলো বিভিন্ন হ্যারাসমেন্ট হয়। সেটাও অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়া একটা বাটন ক্লিক করে পেমেন্ট করে দেওয়ার কারণে করাপশন ইনডেক্সে আমাদের রেটিং কমে আসবে। যত বেশি অটোমেট করা যাবে তত আমাদের জন্য অ্যাডভান্টেজ (সুবিধা)

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বন্দরকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেখানে চাকা ঘোরানো শুরু হয়েছে, সেখানে আর চাকা থামানো সম্ভব হবে না। ইলেকশনের পিরিয়ড আসছে। পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট আসবে। তাদের সেটেল হতে তো সময় লাগবে। ওই সময়টাতে যাতে কোনো কাজ থেমে না থাকে, এ কাজগুলো যাতে এগিয়ে থাকে, সেটা আমরা করে দিয়ে যাব।

চট্টগ্রাম ড্রাইডক দায়িত্ব নেওয়ার পর এনসিটিতে আগের চেয়ে কন্টেনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে জানিয়ে আশিক মাহমুদ বলেন, এপ্রিলমে মাসে যখন এসেছিলাম আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশি একজন অপারেটর তো খুব ভালো করেছে। উনি ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন টিইইউস করেছেন। কেন আপনাদের খালি খালি অপারেটর চেঞ্জ করতে হবে? এখন তো আমরা চেঞ্জ করে প্রমাণ করে দিলাম। আসলে খুব ভালোটা যে কতটুকু এটা নিজেরাই জানি না। আমাদের এটা নির্ধারণ করা নাই এ বন্দর থেকে ম্যাক্সিমাম কতটুকু ভলিউম পাওয়া সম্ভব। রিপোর্ট বলছে এ বন্দর থেকে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন টিইইউস পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব। গত বছর আমাদের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১ দশমিক ৩। সিডিডিএল প্রত্যাশা করছে এটার উপরে চলে যাবে। টেকনোলজি, বেস্ট প্র্যাকটিস এবং গ্লোবাল প্র্যাকটিস আসলে এটি হয়তো তার চেয়ে উপরে চলে যাবে। আমার মনে হয়, এটার সাবজেকটিভ জাজমেন্ট না করে সিডিডিএল ভালো করছে, এটা বেস্ট নাকি সেটা বলার ক্ষমতা আসলে যারা এক্সপার্ট তাদের কাছেই আছে। যারা করে অভ্যস্ত, যারা টপ র‌্যাংক হয়ে অভ্যস্ত তাদের কাছে গিয়ে বুঝতে হবে কোন মডেলটা আমাদের দেশের জন্য মোস্ট ফেভারেবল। ব্যক্তিগতভাবে আমি এবং আমাদের অনেকেরই একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ। দেশের জন্য কোনটা ভালো হবে সেটি করতে হবে। সিডিডিএলকে দিয়ে যদি ম্যাক্সিমাম ক্যাপাসিটি অ্যাচিভ করতে পারি ফ্যান্টাস্টিক। যদি আমাদের মনে হয়, না এখানে আরও কিছু টেকনোলজিক্যাল অ্যাডভানটেজ আনা সম্ভব, আরও গ্লোবাল রেসপেকটিস আনলে আরও হয়তো ভালো হতে পারে, তাহলে সেই কাজটিতে যাওয়ার চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড টেকওভার করার পর প্রথম এক মাসে প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ কন্টেনার হ্যান্ডলিং ভলিউম বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা ড্রাইডক এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য একটা বিরাট অর্জন। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, একজন অপারেটরের কাছ থেকে আরেকজন অপারেটরের কাছে গেলে দেশের কী হবে, হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে, সাতদিনের জন্য থেমে গেলে; ২০১১ সালে এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা পারব কিনাএ আশঙ্কা ছিল। কিন্তু ড্রাইডক, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং নৌবাহিনী মিলে খুব সুন্দরভাবে বিষয়টি হ্যান্ডলিং করেছে। একইসাথে আরও একটা পরিসংখ্যন বের হয়েছে যে, জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইমও শতকরা ১৩ শতাংশ কমে এসেছে। ৩০ শতাংশ ভলিউম বেড়েছে, সময় কমে এসেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে আমাদের টোটাল ভলিউম ছিল ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন টিইইউস। ৩০ শতাংশ ভলিউম বৃদ্ধির বিষয়টি কন্টিনিউ করতে পারলে আমরা সেটা ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন টিইইউসে নিতে পারব।

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রথম নিয়োগ পাওয়া বিদেশি অপারেটর রেডসী গেটওয়ে টার্মিনালের (আরএসজিটি) অভিজ্ঞতা সুখকর নয় জানিয়ে তিনি বলেন, আরএসজিটি আমাদের দেশে প্রথম ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট পোর্ট অপারেটর হিসেবে এসেছে। আরএসজিটি নিয়ে যে অভিজ্ঞতাটা হয়েছে বাংলাদেশের, এটা একেবারেই সুখকর না। উনারা এসেছেন, উনারা আরও কয়েকটা দেশে অপারেট করেছেন। ডিপি ওয়ার্ল্ড বা এপিএমের ৬০৭০টা দেশে অপারেট করার অভিজ্ঞতা আছে। আরএসজিটির হয়তো এতটা দেশে অপারেট করার অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু বেশ কয়েকটা দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশে উনাদের খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক ধরনের জটিলতার মধ্যে উনারা পড়েছেন। সংকটটা হয়েছে মূলত বাংলাদেশ সরকার কখনো ইন্টারন্যাশনাল অপারেটরদের ডিল করেনি। অনেক স্টেপে গিয়ে আটকে যেতে হয়েছে। এ কারণে আরএসজিটি যে ভলিউম গ্রোথ আশা করেছিল সেটা হয়নি।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সকালে বন্দর ভবনের বোর্ড রুমে বন্দরের উন্নয়ন ও অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর রবির সঙ্গে ফাইভজি সার্ভিস চালুর বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিকালে এফ শেডে কেইপিজেড গ্রিন চ্যানেল পরিদর্শন, সিপিএআর গেটে ভেহিক্যাল ও কন্টেনার ডিজিটাল ডাটা এক্সচেঞ্জ সিস্টেম উদ্বোধন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আসা কন্টেনারে তেজস্ক্রিয়তা
পরবর্তী নিবন্ধভাসুর ভাবী ননদের পিটুনিতে গৃহবধূর মৃত্যু, অভিযোগ স্বামীর