প্রকৃতির বর্ণ, গন্ধ ও ছন্দের অনুপ্রেরণায় সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটস্থ ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসবে নানা আয়োজনের অংশ হিসেবে সপ্তাহব্যাপী বই উৎসব উদ্বোধন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন হাসান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস প্রমুখ।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক তাঁর বক্তব্যে বলেন, একুশ আমার অহংকার, একুশ মানে মাথা নত না করা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল, তখন চট্টগ্রামে বসে অসুস্থ অবস্থায় কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী লেখেন ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। সে সময় আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক কোহিনুর প্রেসে কবিতাটি ছাপিয়েছিলেন সাহস করে। পরদিন লালদীঘি মাঠে কবিতাটি পঠিত হয়। এই ঐতিহাসিক ঘটনায় সাহসিকতার পরিচয় দেন প্রেসের ম্যানেজার দবির উদ্দিন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। ভাষার জন্য একমাত্র বাঙালিকে রক্ত দিতে হয়েছে। সেই কালজয়ী ঘটনার সাথে আমরা সম্পৃক্ত থাকতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। উন্নত জাতি গঠনে বইপড়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি মানুষই এক একটি বই। মানুষ বেঁচে থাকবে না, কিন্তু বই থাকবে। উন্নত জাতি গঠনে তরুণ প্রজন্ম ও যুব সমাজকে বইমুখী করতে হবে। তাহলে সন্তানরা মাদকসহ অন্যান্য অপকর্ম থেকে সরে আসবে। বই শুধু জ্ঞান বিকাশের হাতিয়ার নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে আরও বেগবান করে। জ্ঞানকে ধরে রাখতে হলে পড়তে, বলতে, লিখতে ও জানতে হবে।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞানার্জনের শেষ নেই। জাতিকে শিক্ষিত করতে হলে বেশি বেশি বই পড়তে হবে। তরুণ ও যুব সমাজকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বই পড়ার মাধ্যমে মানবিক জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে আমরা একদিন উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ভাষা আন্দেলনের তাৎপর্য থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধের পরিকল্পনা সবকিছু জনগণের কাছে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেছে বই। এজন্য মাসব্যাপী ফুল উৎসবে ফুলপ্রেমীদের হাতে হাতে বই তুলে দিতে এই মেলার আয়োজন। তিনি বলেন, বই পড়ে যারা জ্ঞান অর্জন করতে চাই তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একদিন মানবিক মানুষ হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, মেলা মঞ্চে প্রতিদিন শিশু–কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, রবীন্দ্র–নজরুল–লোক সংগীত, সাধারণ নৃত্য, লোকনৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা ও দেশের গানের আয়োজন করা হয়েছে। মেলাকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী ও বইপ্রেমীদের নিয়ে লেখক আড্ডাসহ নারী কর্নার এবং ওয়াইফাই জোন রয়েছে। বই উৎসবে মোট ৯টি স্টল অংশগ্রহণ করে। স্টলগুলো হলো– তৃতীয় চোখ, শব্দ শিল্প প্রকাশন, প্রজ্ঞালোক প্রকাশন, বইঘর, সাহিত্য বিচিত্রা, বলাকা প্রকাশন, চন্দ্রবিন্দু, গলুই ও স্বাধীন প্রকাশন।