ডিসি, এসপি, র‌্যাবের সিও ও জেল সুপার পরিচয় দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত তারা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৫ মার্চ, ২০২৪ at ৫:৪২ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারে ডিসি, এসপি, র‌্যাবের সিও ও জেল সুপারসহ বিভিন্ন পেশার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল একটি প্রতারক চক্র। এই চক্রের মূলহোতা রেজাউলসহ ৬ প্রতারককে আটক করেছে র‌্যাব।

৫ মার্চ রাতে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী থেকে তাঁদের আটক করা হয়।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ,এম সাজ্জাদ হোসেন।

তিনি জানান, ‘বেশ কিছুদিন যাবৎ কক্সবাজারে একটি সুচতুর প্রতারক চক্র সক্রিয় রয়েছে। যারা কিনা অভিনব উপায়ে র‌্যাবের সিও, জেল সুপার, ডিসি, এসপিসহ নানাবিধ পেশার ভুয়া পরিচয় দিয়ে বিপদাপন্ন মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কমপক্ষে ১০ এর অধিক ভুক্তভোগী প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে এ ব্যাপারে র‌্যাবের নিকট প্রতিকার চান। বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হওয়ামাত্র র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল এ সংক্রান্তে কাজ শুরু করে।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, র‌্যাব-১৫ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডস্থ জে-টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ লিমিটেডের সামনে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই চক্রের মূলহোতা তোরাব উদ্দিন ওরফে রেজাউল করিম ও চক্রের পাঁচ সহযোগীকে আটক করতে সক্ষম হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার), ৫টি ম্যাজিক ডলার, ১টি মাইক্রো গাড়ী , ৮টি এন্ড্রয়েড মোবাইল, ২টি বাটন ফোন ও ১৪টি সীম কার্ড (রবি-৬, গ্রামীন-৪, এয়ারটেল-৩ এবং বাংলালিংক-১) উদ্ধার করা হয় ।

আটকেরা হলেন- চকরিয়া ফাঁসিয়াখালী ঘোনার পাড়ার মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের পুত্র তোরাব উদ্দিন সিকদার (৪০), চকরিয়া উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার আব্দুস সাত্তারের পুত্র বাদশা (৩০), ফাঁসিয়াখালী ঘোনার পাড়া হাঁসের দিঘীর জয়নাল আবেদীনের পুত্র তারেকুর রহমান (২০), একই এলাকার আবুল কাশেমের পুত্র মোঃ জোবায়ের (২৩), মাহমুদ উল্লাহর পুত্র এমদাদ উল্ল্যাহ মারুফ (২০) ও মো. ইউনুসের মেয়ে মিশকাত জান্নাত জুলি (১৮)।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার প্রক্রিয়া সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। প্রথমে চক্রের সদস্যরা কারাগার, আদালত, থানা প্রভৃতি জায়গায় অবস্থান করে টার্গেট করে কৌশলে এমন সব ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতো, যাদের পরিবারের কোনো সদস্য কিনা দীর্ঘদিন যাবৎ কারাগারে আটক রয়েছে। এরপর মূলত দলনেতা রেজাউল, যাকে দলের সদস্যরা ‘বস’ বলে সম্বোধন করে থাকে সে নিজেকে র‌্যাবের সিও, জেল সুপার, ডিসি, এসপি, জজ ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে সেসব স্বজনের নিকট কল করে বন্দীকে খালাস বা জামিন করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং এর বিনিময়ে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫-১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাবি করে।

“যখন আপনার স্বজন দীর্ঘদিন জেলখানায় আছে, তখন আপনি কিন্তু খড়কুটোকেও অবলম্বন করতে চাইবেন” অপ্রত্যাশিত এ সুযোগে স্বজনেরা দ্রুত সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে, আর এ সুযোগটিই নেয় প্রতারক চক্র। বিকাশ বা সরাসরি টাকা গ্রহন করে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিতো তারা। এভাবে গত ২-৩ বছরে কমপক্ষে অর্ধশত মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।

এছাড়া চক্রের মূলহোতা রেজাউল কয়েকবছর আগেও হতদরিদ্র থাকলেও বর্তমানে সে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক। জিজ্ঞাসাবাদে সে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুতুবদিয়ায় প্রার্থী হবার পরিকল্পনা করছিল মর্মে জানিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে সে মোটা অংকের ডোনেশন দিয়ে কুতুবদিয়ায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য সে সব মিলে এ পর্যন্ত কোটি টাকার উপরে খরচ করেছে বলে জানিয়েছেন। সে প্রতারণামূলক চরিত্রের আরেকটি দিক হলো বিয়ে। সে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে নিজের ভাষ্য অনুযায়ী ৫টি, এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী মোট ১১টি বিয়ে করেছে।

আটক আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারে ত্রুটি, কক্সবাজার হোটেল লং বীচকে লাখ টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধপথ হারিয়ে যশোরের বৃদ্ধা চট্টগ্রামে, গন্তব্যে পৌঁছে দিল পুলিশ