উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মুরগির ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আজ বুধবার থেকে নতুন এ মূল্য কার্যকর হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিম উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান নতুন এ মূল্য নির্ধারণের ঘোষণা দেন। খবর বাংলানিউজের।
তিনি জানান, উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার থেকে এ মূল্য কার্যকর হবে। নতুন মূল্য কার্যকরের পর ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। ভোক্তার ডিজি বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে যাতে বেশি মূল্যে ডিম বিক্রি না করা হয় সেজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। তারপরও বেশি দামে ডিম বিক্রি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণ উৎপাদন ও ক্রেতার মাঝে বহুস্তর বা মধ্যস্বত্বভোগীর সংশ্লিষ্টতা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে উৎপাদনকারী, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা পর্যায় বাদে অন্যান্য স্তরগুলো বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মোহাম্মদ আলীম আখতার খান।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিম ডজনপ্রতি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এলাকার দোকানগুলোয় ১৯০ টাকা পর্যন্ত দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের আমদানি শুল্ক কমছে ২০% : বিডিনিউজ জানায়, ডিমের দাম নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে পণ্যটির আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দ্রব্যমূল্যকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে বিশেষ করে ডিমের দাম এই মুহূর্তে ঊর্ধ্বমুখী, আজকে কয়েকটা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডিমের আমদানি শুল্ক ৩৩ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা অর্থাৎ ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোজ্য তেলের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার কার্যালয়ে ডিম সরবরাহকারী এবং আড়তদারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আড়তদাররা সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনবেন, যাতে করে ডিমের দাম কিছুটা কমে আসে, সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। এছাড়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজধানীর ২০টি স্পটে প্রাথমিকভাবে সুলভ মূল্যে দশটি পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। এই পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, সবজি, কাচা পেঁপে ইত্যাদি। পরবর্তীতে অন্যান্য স্পটে এই কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে এনবিআরের একজন কর্মকর্তাও বলেন, এ বিষয়ে মৌখিক আলোচনা শুনেছি। অচিরেই ফাইল প্রস্তুত করা শুরু হবে।
দেশে ডিমের দাম প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তেজিভাব বিরাজ করছে। খুচরা বাজারে প্রতিটি ১৫ টাকার নিচে ডিম কেনা যাচ্ছে না। সরকারি অনুমোদন নিয়ে ভারত থেকে সম্প্রতি কয়েক লাখ ডিম আমদানি হয়েছে; যার প্রতিটির দাম পড়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা। ৩৩ শতাংশ শূল্ক যুক্ত হয়েও ডিমের আমদানি মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রতিটি ৭ টাকার কাছাকাছি। তবে দৈনিক প্রায় ৫ কোটি ডিমের চাহিদার মধ্যে আমদানি করা এই ডিম তেমন প্রভাব রাখতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে আমদানি উৎসাহিত করতে শূল্ক কমানোর উদ্যোগ নিল সরকার।