আজ বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস। ওজন ও পরিমাপ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সর্বকালেই পরিমাপ সকলের জন্য’। প্রতি বছর নিয়ম করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সচেতনতার অংশ হিসেবে মেট্রোলজি দিবস পালন করে। কিন্তু ওজন পরিমাপে কারচুপি কিছুতে থামছে না। পণ্যের ওজন পরিমাপে ডিজিটাল স্কেলের প্রচলন শুরু হয়েছে অনেক বছর আগেই। কিন্তু এখানে চলছে ‘ডিজিটাল কারচুপি’।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা পর্যন্ত সবখানে একই অবস্থা বিরাজমান। প্রতিনিয়ত ওজনে ঠকছেন ভোক্তারা। ওজন পরিমাপ তদারকির দায়িত্ব পালন করে বিএসটিআই। কিন্তু সংস্থাটিতে রয়েছে জনবল সংকট। মাঠ পর্যায়ে যথাযথ তদারকির অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা ওজনে কারচুপি করছেন। ওজন স্কেলে বিএসটিআই’য়ের অনুমোদন থাকা বাধ্যতামূলক এবং সেই স্কেলের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মেয়াদও দেয়া থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যবসায়ী নিজের খেয়ালখুশি মতো ওজন স্কেল ব্যবহার করছেন। পাইকারী বাজারে ৫০ কেজি কিংবা ২৫ কেজি পণ্যের বস্তায় কখনো সঠিক পরিমাণ পণ্য পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, মাছ–মাংস কিংবা সবজির বাজারেও ওজনে ঠকছেন ক্রেতারা। বিভিন্ন সময় ওজনের কারচুপির দায়ে বিএসটিআই অভিযানে নামে। অভিযানে জরিমানাও করা হয়, কিন্তু পরে আবার আগের অবস্থা চলতে থাকে।
জানা গেছে, অতি সম্প্রতি নগরীর বহদ্দারহাট মুরগির বাজার থেকে আলাউদ্দিন নামের এক ক্রেতা ৫ কেজি মুরগি কিনেন। হাতে নেয়ার পর ওজন নিয়ে তার সন্দেহ হয়। পরে তিনি পাশের একটি মুদির দোকানে যাচাই করেন দেখেন ৭০০ গ্রাম ওজন কম। পুনরায় মুরগির দোকানে গেলে বিক্রেতা তাকে ৫ কেজি ওজনই দেখান। এ সময় ওজন নিয়ে ক্রেতা চ্যালেঞ্জ করলে পাশের অন্য ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসে মুরগি বিক্রেতার পক্ষ নেন। এক প্রকার অসহায় হয়ে ফেরত আসেন ক্রেতা আলাউদ্দিন। নগরীর ২নং গেট কণফুলী কাঁচা বাজারের ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ডিজিটাল স্কেলে অনেক ব্যবসায়ী ডিজিটালি চুরি করছেন। এমনিতে জিনিসপত্রের দাম বেশি, তারওপর ওজন দিয়ে ঠকানো হচ্ছে ক্রেতাদের। ডিজিটাল স্কেলের সাথে এক ধরণের স্প্রিং সংযুক্ত করে রাখেন ব্যবসায়ীরা, ওজন মাপার সময় কৌশলে ওই স্প্রিং টান দিয়ে ওজন বাড়ানো হচ্ছে, কয়েকবার প্রশাসনের অভিযানেও এমন কারচুপি ধরা পড়েছে। এখন বাজার করতে গেলে সবার তাড়া থাকে। তাই অনেকের পক্ষে এসব সুক্ষ্ম কারচুপিগুলো ধরা সম্ভব হয় না।
জানতে চাইলে বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ–পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের মেট্রোলজি উইং থেকে নিয়মিত তদারকিমূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা সার্ভিল্যান্স টিমের পাশাপাশি অভিযান চালানো হয়। ওজন কারচুপি’র সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে, এটি ঠিক। তবে সীমিত জনবলের মধ্যেও আমরা পণ্যের ওজন পরিমাপে স্বচ্চতা আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিএসটিআইয়ের লোকজন আমাদের সব সময় বলেন, তাদের জনবল নাই, লজিস্টিক নাই। আসলে বিদ্যমান যে জনবল আছে, সেই জনবলের কাজও হচ্ছে না। সব কথার এক কথা হচ্ছে, কাজের সদিচ্ছা থাকতে হবে। সদিচ্ছা থাকলে সব সম্ভব। এই যে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারী বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে অনেক পণ্য এখনো এখনো মণ হিসেবে বেচাবিক্রি হচ্ছে। এই যুগে তো মণে পণ্য বেচাবিক্রি হওয়ার কথা নয়। এখনো তদারকি যারা করবেন, তারা যদি চুপ থাকেন, ব্যবসায়ীরা সুযোগ তো নিবেই।