ডিজিটাল ডিভাইস হবে প্রধান রপ্তানি পণ্য : প্রধানমন্ত্রী

চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর উদ্বোধন সামর্থ্য অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংরক্ষণের আহ্বান

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৭ জুলাই, ২০২২ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসভিত্তিক প্রথম এ আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর গতকাল বুধবার উদ্বোধন করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের যোগসূত্র স্থাপন করে গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে ১১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ৪ দশমিক ৭ একর জায়গার উপর নির্মিত এই স্থাপনা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রচারাভিযান থেকে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের নতুন ধাপ।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশে আমি মনে করি যে, আজকে আমাদের যে উদ্যোগটা সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আমাদের একেবারে ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে সবাইকেই আমরা যে শিক্ষাটা দিচ্ছি, তার ফলাফলটা এই দেশের মানুষ পাবে। সেটাই আমরা চাই আর সেজন্যই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কাজ করতে।
রপ্তানিযোগ্য ডিজিটাল ডিভাইস বাংলাদেশেই উৎপদিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দিনে আমাদের পণ্য রপ্তানিতে গার্মেন্টসের সাথে সাথে সমান তালে আমাদের ডিজিটাল ডিভাইস বাংলাদেশে উৎপাদন হবে এবং আমরাও রপ্তানি করব। রপ্তানি ক্ষেত্রে এটাই হবে সব থেকে বড় পণ্য, যা আমরা রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং সেভাবে সারা দেশের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়ে, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কোনো ক্ষেত্রেই যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পিছিয়ে না থাকে, সেই ভাবেই তাদের এই প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি। আমি মনে করি যে সমস্ত অবকাঠামো আমরা তৈরি করছি আমাদের আগামীর তরুণ প্রজন্মের মেধা, বুদ্ধি, জ্ঞানের বিকাশ কেন্দ্র এবং তাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেমের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে জাতির স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। যেই বাংলাদেশ জাতির পিতা আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রান্তে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন-সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চুয়েট উপাচার্য ড. মো. রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং উপকার ভোগীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। অনুষ্ঠানে চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের ওপর একটি অডিও-ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
২০১৭ সালের একনেক সভায় চুয়েটের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন প্রকল্পটির অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্পে শেখ জামাল ও রোজী জামালের নামে দুটি ডরমিটরিও নির্মাণ করা হয়েছে, যা একই সময়ে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাসস জানায় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরকার লোড-শেডিং দিতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু এখন আমাদের লোড-শেডিং দিতে হবে এবং বিদ্যুতের উৎপাদন সীমিত করতে হবে কারণ, আমাদের বিদ্যুতের ভর্তুকির পরিমান বহুগুণ বেড়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংরক্ষণের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট সময় ভিত্তিক লোড-শেডিংয়ের জন্য একটি রুটিন তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘কোন এলাকায় কত সময় লোড-শেডিং দেওয়া হবে তার একটি রুটিন তৈরি করুন। কারণ, জনগণ যেন সেজন্য প্রস্তুত হতে পারে এবং তাদের দুর্ভোগ কমানো যায়।’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী তেল, এলএনজি, ডিজেলসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে এবং আমেরিকা ও ইউরোপের রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে পরিস্থিতির যে অবনতি ঘটছে তা উপলব্ধি করে দেশবাসী সরকারকে এ লক্ষে সহায়তা করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তাঁর সরকার বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে মোট ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখার জন্য গ্যাসের চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানিতে আমাদেরকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।’ বর্তমান বাজেটে ৮৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভর্তুকি না কমালে সরকার টাকা কোথা থেকে পাবে।’ তিনি বলেন, ভর্তুকি ছাড়াও তাঁর সরকার দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য প্রণোদণা প্যাকেজ দিয়েছে, ভর্তুকি মূল্যে প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে এক কোটি রেশন কার্ড দিয়েছে এবং বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিচ্ছে, যা অনেক ধনী দেশ ও করেনি।
সরকার প্রধান সারাদেশে ২৭১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দেন। যার মধ্যে ২০৫১টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের অধীনে এবং ৬৬৫টি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এমপিও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর আমেরিকা ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামালের অস্বাভাবিক মুল্যবৃদ্ধি ঘটেছে এবং সরকারকে কী পরিমাণ ভর্তুকি বাড়াতে হয়েছে তারও একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যে ফার্নেস অয়েলের মূল্য ছিল মাত্র ৭০৮ টাকা। সেটা ইউক্রেন যুদ্ধের পর হয়ে গেছে ১ হাজার ৮০ টাকা, অর্থাৎ ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলএনজি যেটা মাত্র ১০ মার্কিন ডলারে ক্রয় করা হতো, যুদ্ধের ফলে সেটা এখন ৩৮ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ২৮০ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে। আমাদের কয়লাও ১৮৭ মার্কিন ডলার ছিল, এখন ২৭৮ মার্কিন ডলার। বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬১ শতাংশ। ডিজেলের লিটার ৮০ মার্কিন ডলার ছিল তা এখন ১৩০ এ চলে আসছে। শোনা যাচ্ছে ৩০০ ডলার পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে। ভোজ্য তেলেরও দাম বাড়ছে। প্রত্যেকটা জিনিষ যে গুলো কিনে আনতে হয় তাঁর দাম অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি কিউবিক মিটার এলএনজি ক্রয়ে সরকারের ব্যয় ৫৯ দশমিক ৬০ টাকা। কিন্তু আমরা সেটা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছিলাম মাত্র ৯ দশমিক ৬৯ টাকায়। যেটা সমপ্রতি ১১ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তারপরও বিশাল অংকের ভুতর্কি রয়ে গেছে সেখানে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতি ইউনিটে উৎপাদন ব্যয় ১২ দশমিক ৮৪ টাকা কিলোওয়াট ঘন্টা, কিন্তু একক প্রতি পাইকারি মূল্যে আমরা দিচ্ছি ৫ দশমিক ০৮ টাকায়, ফার্নেস ওয়েলের প্রতি একক ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে ১৭ দশমিক ৪১ টাকা, সেটাও আমরা ৫ দশমিক ০৮ টাকায় দিচ্ছি। ডিজেলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৩৬ দশমিক ৮৫ টাকা সেখানেও আমরা ৫ দশমিক ০৮ টাকা দরে বিদ্যুৎ বিক্রি করছি। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ১২ দশমিক ৩৭ টাকা,কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৫ দশমিক ০৮ টাকায়। অর্থাৎ সারা বিশ্ব এখন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলোকসজ্জা না করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু