ডিজিটাল গেমিং একটি রোগ, কোন অতলে হারিয়ে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম? সবার কাছে একটি সুপরিচিত শব্দ আসক্তি। কোনো কিছুর প্রতি তীব্র নেশা, টান বা মোহ এটিকে বলা হয় আসক্তি। যা থেকে সামান্য সময়ের জন্য বিচ্যুত হলে মানসিকভাবে কেউ চরম অসুস্থ অনুভব করে। ঠিক তেমনি ২০২৫ এ এসে কিশোর কিশোরীদের জন্য মারাত্মক আসক্তির কারণ ডিজিটাল প্লাটফর্ম। যে ব্যাপারে আমরা অনেকেই জানি না বা অহর্নিশ শুনতে পাই না। আমি একজন ক্ষুদ্র নাট্যশিল্পী এবং সংস্কৃতিপ্রেমী। বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে খেয়াল করলাম শিশুরা কম্পিউটার ই–রিভার্স, ডিজিটাল গেমিং এবং ভিডিও গেমিং এর মতো স্ক্রিনভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আসক্ত এবং স্কুল পড়ুয়া কিশোর থেকে যুবকরা ….। সত্যি! বিষয়টি খুব দুঃখজনক। ২০১৫ সালের এপ্রিলে একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ফেসবুক ব্যবহারকারী হিসেবে ঢাকা শহরের নাম উঠে এসেছে। জরিপে দেখা গেছে আট বছরের শিশুরাও ব্যবহার করছে ফেসবুক। কী ভাবছেন? কী অবাক হলেন? মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভিত্তিক বিনোদনের আরো ভয়াবহ পরিণতির চিত্র পাওয়া গেছে। ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর জরিপে দেখা যায়, ঢাকায় স্কুলগামী শিশুদের প্রায় ৭৭ ভাগ খারাপ সাইটগুলো দেখে। আশ্চর্য হচ্ছেন শুনে? হুম সত্যি! তাই। অষ্টম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ঢাকার ৫০০ স্কুলগামী শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, ছেলে শিশুদের অনেকে রাত জেগে দরজা বন্ধ করে সোশ্যাল মিডিয়া/ ইন্টারনেটে ভিডিও গেমস এবং খারাপসাইটে বুঁদ হয়ে থাকে। অথবা সারারাত ট্যাব বা স্মার্টফোনে সময় অতিবাহিত করছে। মা বাবা মনে করে শিশু শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। প্রতিদিন ক্রমাগত ঘুম বিঘ্নিত হওয়ার কারণে এর প্রভাব পড়ছে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ক্ষুধামন্দা, ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিচ্ছে। আমরা অনেকেই হয়তো জানি না ব্রেইনের হোয়াইট ম্যাটার নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের আবেগ। হোয়াইট ম্যাটার ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে আবেগ ভারসাম্যহীন হয়। মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। স্ক্রিন আসক্তির কারণে শিশুর স্বাভাবিক মনোদৈহিক বিকাশকে চরমভাবে ব্যাহত করছে যারা নিয়মিত গেমিং এ আসক্ত তারা হয়তো এই বিষয়ে ধারণা পাচ্ছে না। সিজিসি গেমিং ডিসঅর্ডারকে একটি রোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তার আন্তর্জাতিক রোগ তালিকায় একে ব্যবহারগত অসুখ হিসেবে চিহ্নিত করে। ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অফ ডিজিজেস আইসিটি ১১ এর ১১ তম রিভিশনে গেমিং ডিসঅর্ডারকে গেমিং আচরণের একটি প্যাটার্ন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং শিশুদের বিভিন্ন রোগ ইতোমধ্যেই গেমিং ডিসঅর্ডারকে নতুন প্রজন্মের রোগ বলে লক্ষ্য করা গেছে। শুধু শিশু নয় বয়স্কদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তন্মধ্যে হৃদরোগ বৃদ্ধি করে এই স্ক্রিন। কী অবাক লাগছে আমার কথাগুলো শুনে? বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও প্রতিনিয়তই এসব রোগের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা এবং আমাদের ছোট্ট সোনামনিরা! আসুন সতর্ক হই আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ কে রক্ষা করি।