ডিও প্রথায় যত সমস্যা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৬ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বেড়েই চলেছে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া একই সময়ের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১৫০ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের বাজার চড়া। এর মধ্যে নতুন করে তেল-চিনির বুকিং দর আবারো বেড়েছে। এছাড়া অগ্রিম ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) প্রথাও বাজারের সর্বনাশ ডেকে আনছে।
তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার সবসময় ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তারা সুযোগ বুঝে দর বাড়িয়ে দেন। তেল-চিনির দর বৃদ্ধি দেশের ইতিহাসে ইতোমধ্যে রেকর্ড ছাড়িয়েছে। দর বৃদ্ধির এই লাগাম কে টানবে, এটাই এখন বড় প্রশ্ন। গতকাল ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে পাইকারিতে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি ২২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৮২০ টাকায়। অন্যদিকে সয়াবিনের দাম মণে ২৫০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ২৬০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে খাতুনগঞ্জে চিনি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণে ১৫০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের তেল ও চিনির আমদানিকারক আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ আজাদীকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-চিনির বুকিং দর বেড়েছে। এর প্রভাবে তেল-চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এখানে সিন্ডিকেট করার কোনো সুযোগ নেই।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডিও স্লিপ’। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজারদর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি, কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায়, ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়। এই সুযোগে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন আজাদীকে বলেন, বর্তমান বাজারে প্রত্যেকটি ভোগ্যপণ্যের বাজার খুব চড়া। দীর্ঘদিন ধরে তেল-চিনির বাজার চড়া। আমাদের দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযানে নামলেও দরপতনে তেমন প্রভাব পড়ে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘পঙ্খিরাজকে’ থামাবে কে
পরবর্তী নিবন্ধআপু না বলে মা বলেন