ডা. নুরুল ইসলাম চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় আলোময় পথ দেখিয়েছিলেন

ইউএসটিসিতে সেমিনারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা । নিজের জীবন অন্যের কাজে লাগালেই সত্যিকারের সম্মান আসে : এম এ মালেক

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১ মে, ২০২৫ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ইউএসটিসির প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় আলোময় পথ দেখিয়েছিলেন। তিনি আজও আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনন্য দ্রষ্টা। তাঁর অবদান সমাজ ও দেশে অপরিসীম। ‘জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের অতুলনীয় উত্তরাধিকার: শিক্ষা, গবেষণা, সমপ্রদায় উন্নয়ন এবং মানবিক সেবায় অগ্রণী অবদান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ কথা বলেছেন। ডা. নুরুল ইসলামের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বুধবার সকালে খুলশী এলাকায় ইউএসটিসি ক্যাম্পাসের কনফারেন্স রুমে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ডা. নুরুল ইসলাম চিকিৎসাশাস্ত্র ও অধ্যাপনার জন্য বিশেষ খ্যাতিমান ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি জাতীয় অধ্যাপক পদ অলংকৃত করেন এবং চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় তিনি আলোময় পথ দেখিয়েছিলেন। তিনি উচ্চশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে চট্টগ্রামে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি) স্থাপন করেছেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপউপাচার্য প্রফেসর এম. মহিউদ্দীন চৌধুরী, ইনস্টিটিউট অব এপ্লাইড হেলথ সায়েন্স এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. রমা বড়ুয়া। সেমিনারে কীনোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব এপ্লাইড হেলথ সায়েন্স (হসপিটাল) এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রফেসর ডা. বদিউল আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষকমন্ডলী।

বক্তব্যে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আরও বলেন, ডা. নুরুল ইসলাম তার জীবদ্দশায় বেশ কয়েকটি সমাজসেবামূলক সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি জনস্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার মধ্যে ইসলামিক চিকিৎসা মিশন, জনসেবা ফাউন্ডেশন, আধুনিক, জাতীয় যক্ষ্মা সমিতি, ইউএসটিসি অন্যতম। উপদেষ্টা সেমিনারের শুরুতে স্মৃতির স্বর্ণালি পাতায় স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আমরা সবাই জীবনে একেকটি বিশেষ উপহার নিয়ে এসেছি। এই উপহার হতে পারে আমাদের ভেতরের যেকোনো গুণ, প্রতিভা কিংবা যোগ্যতা। জীবনের মানে হলো, নিজের ভেতরের সেই প্রতিভাকে খুঁজে পাওয়া। আর জীবনের আসল উদ্দেশ্য হলো, সেই প্রতিভাকে অন্যের কল্যাণে উৎসর্গ করা, সমাজের জন্য কাজে লাগানো। ডা. নুরুল ইসলাম সাহেব এটা পেরেছিলেন। সফলভাবেই পেরেছিলেন। তাই তিনি কিংবদন্তী। আমরা নিজেদের জন্য যা করি তা মৃত্যুর সাথে শেষ হয়ে যায়, কিন্তু আমরা যা করি অন্যের জন্য এবং পৃথিবীর জন্য, তা চিরকাল বেঁচে থাকে। সত্যিকারের সম্মান আসে তখনই, যখন আমরা নিজেদের জীবন অন্যের জন্য কাজে লাগাই।

এম এ মালেক বলেন, ডা. নুরুল ইসলাম সাহেবের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ যার ছিল প্রচুর প্রাণশক্তি। তিনি শুধু একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক, নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, কীর্তিমান গবেষক, সুদক্ষ প্রশাসকই ছিলেন না, ছিলেন সমাজ সচেতন একজন মানুষ। মানুষকে ভালোবাসতেন। সবকিছুকে রাজধানী কেন্দ্রিক না করে, ঢাকার বাইরে উন্নত মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেছিলেন তিনি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই চট্টগ্রামে গড়ে তোলেন এই ইউএসটিসি। এটি শুধু এখন চট্টগ্রামের নয়, বাংলাদেশের গর্ব। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে এসে শিক্ষার আলো নিচ্ছে। ইউএসটিসি প্রমাণ করেছেশিক্ষা কোনো সীমান্ত মানে না, এটি ছড়িয়ে পড়ে হৃদয় থেকে হৃদয়ে, মেধা থেকে মেধায়। তিনি বলেন, মানুষের জীবনের বড় একটা সাফল্য মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা। ডা. নুরুল ইসলাম সাহেব সেটি পেরেছিলেন। চট্টগ্রামের মানুষ বিশ্বাস করতেন, তিনি কখনই অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত ওষুধ লিখতেন না, যথাসম্ভব কমদামী ও সহজলভ্য ওষুধ লিখতেন। এমনকি কখনও কখনও লিখে দিতেনকোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া অযথা রোগীকে কোনো টেস্ট করাতেন না।

আজাদী সম্পাদক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকের দুনিয়া দ্রুত পাল্টাচ্ছে। কিন্তু মানুষের হৃদয় এখনও মানবতার ভাষায় কথা বলে। আপনাদের চোখে স্বপ্ন আছে, হাতে প্রযুক্তি আছে, কিন্তু মনে যদি মূল্যবোধ না থাকেতবে সবই বৃথা। আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে ডা. নুরুল ইসলাম সাহেবের উত্তরসূরি হতে চান, তবে পড়াশোনার সাথে সাথে সেবার মনোভাব, নৈতিকতা, এবং স্বপ্ন দেখার সাহস রাখুন। কখনোই স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে ধূসর হতে দেবেন না।

বক্তারা ইউএসটিসির প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে উপর স্মৃতিচারণ করেন এবং বাংলাদেশের চিকিৎসা ও বিজ্ঞান গবেষণার তার অবদান নিয়ে আলোচনা করেন। দিনব্যাপী উক্ত অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল ইউএসটিসির প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের জীবনের উপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী, রক্তদান ও রক্তগ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচি এবং তার লেখা বইয়ের প্রদর্শনী হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসিনার বিরুদ্ধে আরেক মামলা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬