ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন প্রবাসীরা

একদল চিকিৎসকের গবেষণা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

প্রবাসীদের বেশিরভাগই ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপের মতো বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন। চট্টগ্রামের প্রবাসীদের নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। চট্টগ্রামের এক দল চিকিৎসক ১০০ জন প্রবাসী ও বিদেশ ফেরত ১০০ জনের ওপর এক বছর ধরে এ গবেষণা পরিচালনা করেছেন।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ প্রবাসী ডায়াবেটিসে, ৫৬ শতাংশ স্থূলতায় আক্রান্ত। এ ছাড়া ৪৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। প্রবাসীদের ৮১ শতাংশ রক্তে চর্বির সমস্যায় ভুগছেন। ইসিজি বিশ্লেষণে দেখা যায়, শতকরা ১৬ ভাগ প্রবাসী হৃদরোগেও আক্রান্ত।
গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। একই কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আমির হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নিছা খানম, এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রামের মেডিসিন কনসালট্যান্ট রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের হরমোন বিভাগের কনসালট্যান্ট মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন ও একই হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগের কনসালট্যান্ট মোহাম্মদ আকতারুল ইসলাম চৌধুরী এ গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক অনুদানে এ গবেষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার (আজ) চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিতব্য একটি ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ সিম্পোজিয়ামে গবেষণা সংক্রান্ত প্রবন্ধটি উপস্থাপন করা হবে বলে গবেষক দল জানিয়েছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ১০০ প্রবাসীর ৩২ শতাংশই সৌদি আরবে থাকেন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও কাতারে বসবাসরত প্রবাসীরাও এ গবেষণার আওতায় এসেছেন। সবচেয়ে কম সংখ্যায় ছিলেন ইতালি ও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসীরা। এই ১০০ জন প্রবাসী ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বয়স ছিল ২১ থেকে ৭১ বছর।
গবেষক দলের প্রধান কামরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের প্রবাসীদের স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের সমস্যা সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রক্তে চর্বির পরিমাণও বেশি পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশে বসবাসরত ব্যক্তিদের চেয়ে প্রবাসীদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিড কম পাওয়া গেছে। প্রবাসীদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বসে কাজ করা, হাঁটাহাঁটি কম করাসহ নানা কারণে এসব রোগ হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের যেসব প্রবাসীদের ওপর গবেষণা করা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই বসে থাকা কাজ করেন বলে জানান ডা. কামরুল ইসলাম।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রবাসীদের সাড়ে ৯ শতাংশ দোকানের বিক্রয়কর্মী, সাড়ে ৭ শতাংশ মেকানিক ও ২ শতাংশ বিভিন্ন অফিসে চাকরি করেন। এ ছাড়া নিজস্ব ব্যবসা, দৈনিক শ্রমিক, গাড়ির চালনার মতো পেশায়ও যুক্ত আছেন অনেকে।
অসংক্রামক ব্যাধি থেকে প্রবাসীদের সচেতন থাকার জন্য গবেষণায় কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে প্রবাসজীবনে যাওয়ার আগেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নির্দিষ্ট সময় পরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অন্যতম। এ ছাড়া প্রবাসীদের কর্মঘণ্টা কমানো ও নিয়মিত শরীরচর্চার ওপর জোর দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমশক নিধনে গতি বাড়ানোর উদ্যোগ
পরবর্তী নিবন্ধঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আমদানি, ৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা