ডায়াবেটিস চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ বেশি জরুরি

| শুক্রবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ১৪ নভেম্বর। বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশ্বময় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এটি একটি ক্যাম্পেইন। বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগ ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায়, বিশ্ব ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সালে ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও জনসচেতনতার লক্ষ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

ডায়াবেটিসকে বলা হয় ‘মাদার অব অল ডিজিস’ বা সব রোগের মা। কারণ এই রোগের প্রভাব দেহের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে বইতে হয়। কিডনি, লিভার, হার্ট, ব্রেইনসবকিছুই এই রোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই রোগ একবার হলে আর পিছু ছাড়ে না।

চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ বেশি জরুরি। শুধু ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বরং জীবনযাপনে যদি গুণগত ও স্বাস্থ্যগত পরিবর্তন আনা যায়তাহলেই সত্যিকারের সুফল মিলবে। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে মানসিক চাপমুক্ত থাকা ও অতিভোজন এড়িয়ে চলা দরকার। বলা যায়, জীবনযাপনে কিছু অভ্যাস সংযোজন এবং বিয়োজনের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের হিসাব মতে, ২০১৯ সালে প্রতি ১১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন, যার মোট পরিমাণ ৪২৫ মিলিয়ন। ২০৪৫ সালে ৪৮ শতাংশ বেড়ে তা ৬২৯ মিলিয়ন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পৃথিবীর মোট ডায়াবেটিস রোগীর ৮৭ শতাংশই উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে বাস করছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি, তেমনি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্থান শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম। কিন্তু আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, ২০৩০ ও ২০৪৫ সালে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে থাকবে। পৃথিবীতে বর্তমানে উচ্চ হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর ৯৭ শতাংশই টাইপ২। এ ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। পদক্ষেপ নিলে এ রোগকে অনেক বিলম্বিত করা যায়।

দেশে ডায়াবেটিস সম্পর্কে অসচেতনতার বিষয়টি উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বে এখন প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস আক্রান্তের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম। এই তালিকায় ওপরের দিকে থাকা সুখকর কিছু নয়, তবে এটাই বাস্তবতা। দেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, কিন্তু এদের বড় একটা অংশ এ সম্পর্কে জানেই না। এটা এখন ছাইচাপা আগুনের মত অবস্থায় আছে।

তবে শঙ্কা থাকলেও ডায়াবেটিস চিকিৎসায় বাংলাদেশ এখন বেশ ভালো অবস্থায় আছে বলে উল্লেখ করেন তাঁরা। তাঁদের ভাষায়, দেশে এখন পার্সোনালাইজড মেডিসিনের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একেক রোগী একেক কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। তাই তাদের বয়স, রোগের ইতিহাস, ওজন এমনকি রোগীর স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনায় নিয়েও এখন চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তারা। তাঁরা জানান, দেশের অন্তত ১৪টি মেডিকেল কলেজে এখন এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ রয়েছে। এর মাধ্যমে তারা যেমন সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তেমনি নতুন এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট তৈরির কাজও চলছে পুরোদমে।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন, কর্মস্থলে নিষ্ক্রিয় সময়ের ফলে ওজন বাড়ছে। মানুষ এখন কায়িক পরিশ্রমের চেয়ে যন্ত্রের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। আর সে কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে মানসিক চাপমুক্ত থাকাও দরকার। তাঁরা ডায়াবেটিসকে ‘মহামারি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, অনেক মহামারি একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ডায়াবেটিস বেড়েই চলেছে। তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে যেন তারা প্রান্তিক মানুষকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন। এছাড়া ধর্মীয়, সামাজিকভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব এবং গণমাধ্যমকেও রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখতে হবে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ উপায় বাতলে দিয়ে তাঁরা বলেন, প্রতিরোধের মূলমন্ত্র হলো সুস্থ জীবনযাপন। নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত চিনি ও তেলজাত খাবার পরিহার, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তিএসব ছোট অভ্যাসই বড় পরিবর্তন আনতে পারে। স্থূলতা, ধূমপান ও মাদক থেকে দূরে থাকা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

তাঁরা বলেন, ‘ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণই শুধু নয়, আবশ্যিক অনুষঙ্গ হচ্ছে সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি। যার অর্থ হলো, একজন ব্যক্তির সামগ্রিক রোগ এবং অন্যান্য চিকিৎসা বিবেচনা করে ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য সঠিক এবং সবচেয়ে উপযোগী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ। তাই ডায়াবেটিস শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে