ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে যা করতে হবে

কোমল পানীয়, আঙ্গুর, বেদানা খাওয়া মানা

| বুধবার , ৩০ মার্চ, ২০২২ at ১২:০২ অপরাহ্ণ

গরমের শুরুতেই ঢাকায় বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন হাজারের বেশি রোগী আসছে আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালে। অল্প দিনে এত বেশি ডায়রিয়া রোগী আগে দেখা যায়নি। শয্যায় কুলাতে না পেরে তাঁবু টানিয়ে অস্থায়ী জরুরি ওয়ার্ড খুলে সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছে উদরাময় গবেষণার আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠান। এই সময়ে ডায়রিয়া হলে কী করতে হবে, আর ডায়রিয়া প্রতিরোধেই বা কী করণীয় সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। খবর বিডিনিউজের।
ডায়েরিয়া কেন হয় : পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার জন্য দায়ী কিছু ব্যাকটেরিয়া। আইসিডিডিআর,বির হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, গরমের সময় সিগেলা, ই কোলাই, কলেরা (ভিব্রিও কলেরি) এবং শীতকালে রোটাভাইরাসের মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়। পানিবাহিত এসব জীবাণু পানি ছাড়াও পচা-বাসি খাবারে জন্মে অথবা ছড়ায়, বলেন তিনি। জীবাণুটি কীভাবে ছড়ায় তার উদাহরণ দিতে গিয়ে ডা. বাহারুল বলেন, একটা যদি কোনোভাবে পড়ে পচা-বাসি খাবারে, সে রেপ্লিকেট করে। এটা থেকে চারটা, চারটা থেকে ১৬টা। গরম খাবারে এই জীবাণু পড়লেও সে তেমন ছড়াতে পারে না। ডায়েরিয়ার জীবাণু আছে, এমন পানি দিয়ে তৈরি করা খাবার খেলেও ডায়েরিয়া হয়।
ডায়েরিয়া হলে যা করতে হবে : আইসিডিডিআরবি বলছে, ডায়রিয়া তাৎক্ষণিক ভালো হয় না। নিয়ম মেনে খাবার স্যালাইন এবং পথ্য খেলে ডায়েরিয়া ধীরে ধীরে ভালো হয়। সংস্থাটি বলছে, কারও ডায়েরিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে ১ প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। বড়দের (১০ বছরের বেশি বয়সী) ডায়েরিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর ১ গ্লাস (২৫০ মিলি) খাবার স্যালাইন খেতে হবে। শিশুদের ডায়েরিয়া হলে, প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন তত চা-চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে আনুমানিক সেই পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশু বমি করলে তাকে ধীরে ধীরে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যেমন- ৩ বা ৪ মিনিট পর পর ১ চা-চামচ করে খেতে দিতে হবে। শিশুকে কোনো অবস্থাতেই বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। ৬ মাসের বেশি বয়সী রোগী খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাবে। ৬ মাস থেকে ৫ বছরের শিশুকে প্রতিদিন ১টি করে জিংক ট্যাবলেট পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াতে হবে। রোগীকে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার যেমন- ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ, ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। রোগীকে কোমল পানীয়, আঙ্গুর, বেদানা খাওয়ানো যাবে না।
ডায়েরিয়া থেকে বাঁচার উপায় : ডায়রিয়া এড়াতে খাবার ও পানি জীবাণুমুক্ত রাখার পরামর্শ দিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। পানি ফুটানোর সময়, বলক উঠার পর আরও পাঁচ মিনিট চুলায় রাখতে হবে, পানি ঠাণ্ডা হলে পান করতে হবে। পানি ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি ৩ লিটার পানিতে একটি পানি-বিশুদ্ধকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করা যেতে পারে। রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও উন্মুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। খাওয়ার আগে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। পায়খানা করার পর অথবা শিশুর পায়খানা পরিষ্কার করার পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
শিশুকে ফিডারে কিছুই না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। যদি খাওয়াতেই হয়, তবে ফোটানো পানি ও সাবান দিয়ে ভালো করে ফিডারটি ধুয়ে, ফিডারের নিপলের ছিদ্রটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলা মামলার এক আসামির জামিন মঞ্জুর
পরবর্তী নিবন্ধটিলা কেটে বালু বিক্রি