ডায়াবেটিসের ব্যাপকতা রোধে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সহযোগিতা

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ at ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ

সূচনা : বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হলো বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্যাম্পেইন যা প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর পালন করা হয় বিশ্বব্যাপী।

উৎস : ১৯৯১ সালে ১৪ নভেম্বরকে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসাবে ঘোষণা করে বিশ্ব ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু) কেননা ঐদিন ইনসুলিনের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ফ্রেডেরিক ব্যান্টিংয়ের জন্মদিন এবং আরেক বিজ্ঞানী ও চার্লস বেস্ট একসাথে ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন। আইডিএফএর মতে, পৃথিবীতে প্রতি ১০ জনে ১ জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। পৃথিবীতে প্রায় ৪০ কোটি লোক এবং বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমানে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম, প্রথম স্থানে চীন, দ্বিতীয় ভারত। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী প্রতি ১০০ জন যুবকের মধ্যে ৭৪ জনের বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যেখানে পুরুষের হার ৬.৯ এবং নারী আক্রান্তের হার ৭.৮ শতাংশ। ডায়াবেটিস এখন একটা কমন রোগ, যা প্রায় বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যমান। যার প্রকটতা ও ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, যেটা কাম্য নয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় সোয়া কোটি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। ডায়াবেটিস সারাজীবনের রোগ, একবার আক্রান্ত হলে সেটাকে বহন করতে হয় বিধায় শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা এবং আর্থিক খরচ মিলেমিশে জীবন দুর্বিষহ করে তুলে।

প্রতিপাদ্য : বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্যসুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার, তা বাস্তাবয়নে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল বদ্ধপরিকর।

প্রতিরোধের উপায় : ডায়াবেটিস থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রথমে নিজেকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। যেভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চললে বা খাওয়া খেলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যাবে তার জন্য প্রয়োজন সৎ পরামর্শ, সে অনুযায়ী জীবন (লাইফ স্টাইল) পরিচালনা করা। এ সম্পর্কিত পরামর্শের জন্য নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল, যেখানে প্রতিদিন ডায়াবেটিসের নিয়মকানুন সম্পর্কে ক্লাশ নেওয়া হয় এবং ডাক্তার, পুষ্টিবিদ ও টেকনিশিয়ানের সমন্বয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। আমি মনে করি এই ক্লাশটি মনোযোগসহকারে শ্রবণ ও সে মোতাবেক পালন করলে আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন।

প্রতিকারের উপায় : আপনি যদি ডায়াবেটিস আক্রান্ত হন, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল আপনাকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছে। কারণ ডায়াবেটিসের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল। কারণ এখানে একই ছাদের নীচে ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসা তৎক্ষণাৎ দেওয়া হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে যার মাধ্যমে আপনি চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে পারবেন। তাছাড়াও যদি কোনো জটিলতা বৃদ্ধি পায় তাহলে আপনাকে হাসপাতালে ইনডোর বিভাগে ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা প্রদান করত পুরোপুরি আরোগ্য লাভে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

ফুট কেয়ার বিভাগ : চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের আরও উল্লেখযোগ্য বিভাগ হচ্ছে ফুট (পা) কেয়ার বিভাগ। ডায়াবেটিস সংক্রান্ত যেসব রোগীর পায়ের ক্ষত বা ঘাএ আক্রান্ত, তাদের যথাযথ চিকিৎসা, সার্জারি সেবার মাধ্যমে আপনার হাত ও পা এবং হাত ও পায়ের আঙ্গুল রক্ষা করা যা কাটা ছেঁড়া তথা অপারেশনের মাধ্যমে যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আরোগ্য করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের ফুট কেয়ার বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দের।

ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগ : ডায়াবেটিস যেহেতু সকল রোগের মা বা আহ্বায়ক, অতএব আপনাকে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি মেডিসিন, হার্ট, কিডনি, চক্ষু, গাইনি, চর্ম, দাঁত, ফিজিক্যাল মেডিসিন, ফিজিওথেরাপি, মা ও শিশুরোগ, শিশু রোগ, অর্থোপেডিক, ড্রেসিং, ডায়ালাইসিসসহ আরো অনেক পরিষেবা চালু আছে, যেন রোগীদের হাসপাতালের বাইরে অন্য কোথাও চিকিৎসা সেবার জন্য যেতে না হয়। এছাড়াও স্বল্পমূল্যে আইসিইউ, সিসিইউ, এসডিএই, এইচডিইউ সেবাও চলমান থাকায় এবং ইমার্জেন্সী বিভাগ ২৪ ঘন্টা খোলা থাকায় এবং ইনডোর বিভাগে ভর্তি রোগীদের জন্য ৫ বেলা খাবার প্রদানের কারণে রোগীরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

সেবা দোরগোড়ায় : ডায়াবেটিস রোগী সেবাকে শহরের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রামের ইপিজেড, এনায়েত বাজার, অক্সিজেন ও বহদ্দারহাট শাখায় হাসপাতালের আউটডোর সেবা চলমান রাখার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃতি ঘটাতে আমরা ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারায় সেবার পরিধি বৃদ্ধি করেছি। যাতে গ্রামাঞ্চলের মানুষের কষ্ট করে শহরে চিকিৎসার জন্য টাকা খরচ করে আসতে না হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাই অর্থনৈতিক জোনে স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা