সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যতই শক্তিশালী হোক না কেন বিশেষ প্রয়োজন কিংবা জরুরি কাজে আমাদেরকে এখনো ডাক বিভাগের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। কোথাও কোনো দরকারী কাগজপত্র, দলিল, চিঠিপত্র, আবেদন পত্র, বই এবং আরো অনেক কিছু পাঠাতে আমাদেরকে ডাক বিভাগের কাছে যেতে হয়। এই প্রসঙ্গে আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছি, কিছুদিন আগে আমার একক বই প্রকাশিত হলে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আমার বই নিতে ইচ্ছে পোষণ করেন। তখন আমি ডাক বিভাগের উপর আস্থা রেখে অনেকগুলো বই পাঠাতে থাকি। প্রথমত আমি অনেকগুলো বই ডাক বিভাগ হতে রেজিস্ট্রি করে পাঠাই আমার সেই বইগুলো খুব দ্রুত পাঠকের হাতে চলে যায়।প্রতিটা বই রেজিস্ট্রি করতে ৩৫ টাকা নিয়েছে আমার কাছ থেকে। দ্বিতীয় দফায় আমি আরো কয়েকটা বই রেজিস্ট্রি করি সেগুলো ও ঠিক সময়ে পাঠকের হাতে পৌঁছে যায়। কিন্তু তৃতীয় দফায় আমার আস্থা বেড়ে যাওয়ার কারণ বশত আমি আরো কয়েকটা বই পাঠকের কাছে পাঠানোর জন্য ডাক বিভাগে যাই। এবার আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বইগুলো রেজিস্ট্রি করবো না এমনিতেই পাঠিয়ে দিব। এই বইগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটা বই আবার আমি নিজে থেকে অনেক সম্মানিত মানুষের কাছে উপহার হিসেবে পাঠালাম। ডাক বিভাগ তখন বারবার বলতে লাগলো, ম্যাডাম আপনার বই এভাবে যাবে না!
কিন্তু বইগুলোর ওজন মেপে ঠিকই একটা বইয়ের জন্য বিশ টাকা করে নিয়েছেন শুধু রেজিস্ট্রি করা হয়নি। যাই হোক তৃতীয় দফায় আমি বইগুলো পাঠানোর পর সবাইকে ইনবক্সে মেসেজ দিলাম বই হাতে পেলে আমাকে জানানোর জন্য। এদিকে বই পাঠানোর পনেরো দিন পরও কেউ আমাকে বই পেয়েছে এরকম মেসেজ দেননি। এতে আমি হতাশ হলাম। আহা উপহার হিসেবে নিজে থেকে বইয়ের কথা বললাম অথচ কেউ বই হাতে পেলেন না। দুদিন পর আমি আবার পোস্ট অফিসে গেলাম। বিস্তারিত উনাদের সব বুঝিয়ে বললাম।
আমার সব কথা শোনার পর পোস্ট অফিসের সবার একটাই কথা রেজিস্ট্রি ছাড়া কোনো কিছু এখন যায় না! আমি চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন যাবে না? এটা কি সরকারি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রি করলেই যাবে? জরুরি বই কিংবা কাগজপত্রের কি কোনো গুরুত্ব নেই? এতগুলো কথা নিজে নিজে বলে যাচ্ছি, যে কথাগুলো তারা কেউ কানে তুলছে না। তাদের এক কথা, যাবে না মানে যাবে না! আমি খুব হতাশ হয়ে ফিরে এলাম। সরকারি ডাক বিভাগের উপর আস্থা চিরতরে হারিয়ে গেলো। অবশেষে পোস্ট অফিস থেকে এইভাবে হতাশ হয়ে ফিরে এলাম!