বাঁশখালীর প্রায় ৮ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট ও নানা কারণে যথাযথ সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রান্তিক জনপদে অবস্থিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেবা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন। শুক্রবার এবং সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত তারা প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মানুষকে সেবা দিবেন এটাই বিধান। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই নিয়ম তারা মানেন না অনেক ক্ষেত্রে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বাঁশখালীর প্রায় ৮ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয়স্থল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন আউটডোরে অনেক রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। এদিকে শূন্য পদে জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু ও সার্জারি ২ জন, সংযুক্তিতে অন্যত্র কর্মরত ৪ জন মেডিকেল অফিসার, অনুপস্থিত (প্রশাসনিক ব্যবস্থাধীন) ১ জন মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন (প্রশাসনিক ব্যবস্থাধীন) ১ জন, পদ শূন্য ৪ জন মেডিকেল অফিসার, সিনিয়র স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ, এসএসিএমও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয়, কুক মশালচি, মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থকর্মীসহ ৫৪টি পদ শূন্য বলে সূত্রে জানা যায়। একদিকে রোগীর চাপ অন্যদিকে উপরোক্ত শূন্যপদের কারণে দায়িত্বরতদের এমন বেহাল অবস্থা বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা দেওয়ার বিধান থাকলেও কেউ শনি–সোমবার, কেউ রোব–মঙ্গল– বৃহস্পতিবার, আবার কেউবা শনি–মঙ্গল–বৃহস্পতিবার স্বল্প সময় সেবা দেন। উল্লেখিত দিনে তারা আবার বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতালে চেম্বার শিডিউল দিয়ে রাখেন। প্রাইভেট চেম্বারের সাথে মিল রেখেই মূলত তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সেবা দেওয়ার বিধান থাকলেও সকাল দশটার আগে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হাসপাতালে অনেক সময় আসেন না। আবার বেলা একটার পরও কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে হাসপাতালের নির্ধারিত কক্ষে পাওয়া যায় না। এই তিন ঘণ্টা সেবা দেওয়ার মাঝখানে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কক্ষে চা বিরতিসহ নানা অফিসিয়াল কাজ। এরমধ্যেই আবার রয়েছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য বিশেষ সময়। এভাবে প্রতিনিয়ত চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা কার্যক্রম। আবাসিক মেডিকেল অফিসার সার্বক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা থাকলেও চন্দনাইশ উপজেলায় গিয়ে তিনি ব্যক্তিগত চেম্বার করেন নিয়মিত বলে সুত্রে জানা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতো মেডিকেল অফিসারদের অবস্থাও একই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বর্তমানে হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলমান রয়েছে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ, নারী ও শিশু ওয়ার্ডগুলোতে এখনও স্থানভেদে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বলে রোগীরা জানান।
সিট সংকটের কারণে বেশ কিছু রোগী ও স্বজনেরা মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। অসহায় ও নিরুপায় মানুষেরাই মূলত এখানে চিকিৎসা সেবা নেন। হাসপাতালের টয়লেটের অবস্থাও খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের নিজস্ব ২ জন এবং পৌরসভার অধীনে ৪ জন পরিচ্ছন্নকর্মী রয়েছে। তাদের দিয়ে যতটুকু সম্ভব পরিষ্কারের চেষ্টা করা হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দায়িত্ব অবহেলার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. সব্যসাচী নাথ জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রতিদিনই আসার কথা। যারা আসেন না তাদের শোকজ করা হয়। একজনের বেতনও আটকে দেওয়া হয়েছে। এ সময় জনবল সংকট ও তার সীমাবদ্ধতা নিয়েও প্রতিবেদন লিখতে প্রতিবেদককে আহ্বান জানান তিনি। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী টেলিফোনে জানান, যে অভিযোগগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা শুনেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।