ডাকসুর বিজয়ীদের ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানালেন সালাহউদ্দিন

| বৃহস্পতিবার , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিজয়ীদের ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দলীয়ভাবে নয়, নিজের তরফ থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, গণমাধ্যমগুলো সকাল থেকে জানতে চাইছে.. ডাকসু নির্বাচন হল এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হবে এই নির্বাচনগুলোর ট্রেন্ড কি এবং এই নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আপনাদের মন্তব্য কি? যারা আজকে জয়ী হয়েছেন তাদের প্যানেলটা ছিল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। সেই ব্যানারে যারা জয়ী হয়েছেন আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে অভিনন্দন জানাইএটাই গণতন্ত্রের রীতি। খবর বিডিনিউজের।

নির্বাচনের কিছু ত্রুটি নিয়ে সালাহউদ্দিনের ভাষ্য, কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি নির্বাচনে হয়েছিল যেহেতু যাত্রা অনেক বছর পরে হয়েছে কিন্তু ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল। সালাহ উদ্দিন বলেন, দুইএকটি পত্রিকায় দেখলাম যে, ছাত্র শিবিরের প্যানেল জয়ী হয়েছে আমি সাংবাদিক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমার জানা মতে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির এই ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, এই নামে এই ব্যানারে কোনো প্যানেল প্রদান করা হয়েছে কি? না। তো পত্রিকায় বিভিন্ন মিডিয়াতে এভাবে আসছে কেন প্রশ্ন সেখানেই?

সালাহউদ্দিন বলেন, একটা বিষয় লক্ষ্যনীয়, ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নিজের দলীয় ব্যানারে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণ করেছে। আর অন্যান্য কয়েকটি দল এমনকি ইসলামী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি দল নামে করেছে। কেউ কেউ স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য নামে করেছে, কেউ সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ নামে করেছে, বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ নামে করেছে, অপরাজেয় ৭১ নামে করেছে। যারা স্বনামে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়নি তার একটা উদ্দেশ্য তো অবশ্যই আছে?

সালাহউদ্দিন বলেন, এখানে অনেকেই প্রশ্ন করেছে এটা কি জাতীয় রাজনীতি কোন প্রভাব রাখবে? আমি বলতে চাই, ডাকসু, রাকসু, জাগসু, চাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনআমার ছাত্র জামানা থেকেই আমরা তখন ভোট দিয়েছিদেখেছি যাদেরকে নির্বাচিত করেছিএটা আশির দশকের কথা বলছি। ৭০ দশকের শেষের দিকের ছাত্র আমি। যারা ডাকসুতে নির্বাচিত হয়েছেন তারা বৃহৎ কোন রাজনৈতিক মূল দলের নয় ছাত্র সংগঠন না হলে জাতীয় রাজনীতিতে তারা আসতেই পারে না। কারো নাম নেবো না। এখনো ডাকসুতে ভিপিজিএস হয়েছেন অনেক নেতা জাতীয় রাজনীতিতে আছেন, কেউ বা হারিয়ে গিয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাদের কেউ কেউ জাতীয় সংসদে এসছেন। বাকিরা এখনো পর্যন্ত লড়াই করছেন, সংগ্রাম করছেন আসার জন্য। আমি কারো নাম নিয়ে বলাটা ঠিক হবে না। আমি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি কিন্তু এখনো পর্যন্ত কামিয়াব হয় নাই। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি এবং ছাত্র রাজনীতির একটা পোস্টমর্টেম.. বিশ্লেষণ।

তিনি বলেন, তবে এটা আমি উৎসাহিত করি যে, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ইতিহাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন যা কিছুই হয়েছে, সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে সেটা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেটা হয়েছে অথবা ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে সেটা হয়েছে। সেই রাজনীতির সুতিকাগার এবং ছাত্র আন্দোলনের সুতিকাগার, রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের সুতিকাগার সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র রাজনৈতিক চর্চা থাকতেই হবে। যারা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে বলেন বা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলেন আমি তাদের বিরুদ্ধে। কারণ রাজনীতির চর্চা শিক্ষাঙ্গন পাঠশালা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্ব উঠে আসে ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে।

সালাহ উদ্দিনের কথায় চব্বিশের ছাত্রগণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বড় সংগ্রাম হল বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের সংগ্রাম। আমাদের এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের সংগ্রাম চালু রাখতে হবে, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা প্রচলন করতে হবে। সেই সংস্কৃতি কি? গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, সহনশীলতার সংস্কৃতি, সহমর্মিতার সংস্কৃতি এবং সহনশীলতাসহমর্মিতার মধ্য দিয়ে আমরা পরস্পর রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে প্রতিযোগিতা করব, রাজনৈতিক চর্চা করব।

তিনি বলেন, যদি আমরা ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না চাই, ব্যক্তি স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতি অথবা দলীয় স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতির উত্থান না চাই, সংসদীয় একায়কতন্ত্র না চাই এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কামনা না করি তাহলে আমাদেরকে নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, চর্চা করতে হবে লালন করতে হবে। এইভাবেই আমরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা বিগত দিনের ফ্যাসিবাদী অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করতে পারবো।

রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। কিন্তু দিনশেষে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমরা সবাই সবাইকে অভিনন্দন জানাবো এটাই আমাদের নীতি হবে। সালাহউদ্দিন মনে করেন, রাজনীতির শিক্ষা শুরু হতে হবে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে। তবে এমন ছাত্র রাজনীতির পক্ষে তিনি নন, যা ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর অতীত নজির স্থাপন করে দিয়েছে। আমরা এমন ছাত্র রাজনীতি চাই, যেই ছাত্র রাজনীতির মূল সূত্র হবে বাংলাদেশে জবাবদিহিতামূলক সাম্যভিত্তিক সুশাসন এবং নৈতিকতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করবে। এটা আমাদেরই অঙ্গীকার যে, আমরা এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা, এমন সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই সামনের জীবনে যার মূল ভিত্তি হবে এই দেশের সমাজের রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহিতার রাজনীতি সৃষ্টি করা, সুশাসন নৈতিকতার রাজনীতি সৃষ্টি করা, সাম্য এবং মানবিক মর্যাদা ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করার রাজনীতি আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিক পরিবর্তনের জন্য আমরা নিজেরা সংগ্রাম করি, প্রস্তুত হই এবং প্রতিষ্ঠা করি এই আহ্বান আজকে আমি রাখছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচান্দগাঁওয়ে ব্যবসায়ীর ছিনতাই হওয়া সাড়ে ১৪ লাখ টাকা উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ডাকসুতে জয় পেয়েছে শিবির