প্রার্থীদের নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসেন ভোটাররা। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে প্রায় সব প্যানেলের প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি নানা অভিযোগ। এমন প্রেক্ষাপটে একজন পোলিং অফিসারকে অব্যাহতি দেওয়ার কথাও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল সকাল আটটা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ এবং চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। তবে একটি কেন্দ্রে বিশ মিনিট পরে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সেখানকার রিটার্নিং কর্মকর্তারা ভোটার থাকা সাপেক্ষে এ সময় শেষের দিকে সমন্বয় করে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এবারই প্রথমবার এই নির্বাচনে হলগুলোর বাইরে ভোটকেন্দ্র নির্ধারিত হয়েছে। ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বেগম রোকেয়া হলের ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজ ও বিবিসি বাংলার।
গতকাল মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেও ডাকসু নির্বাচনের ফল জানার অপেক্ষা এখনো শেষ হয়নি। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা শহীদুল জাহিদ গত রাত ১টায় বলেন, তার কেন্দ্রে শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়েছেন। তাদের ব্যালট স্ক্যানিং শেষের দিকে। স্ক্যানিং শেষ হলে কেন্দ্র থেকেই হল ও ডাকসুর ফল প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় জানিয়েছে, সব কেন্দ্রের ফল হাতে পাওয়ার পর সিনেট ভবনের সামনে থেকে সমন্বিত ফল ঘোষণা করা হবে। গতকাল বিকাল ৪টায় ডাকসু ও হল সংসদের ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এরপর ব্যালট এক জায়গায় করে গণনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা মোট ছয়টি ব্যালটে ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি ব্যালটে ভিপি ও জিএস, একটি ব্যালটে এজিএস, সম্পাদক পদগুলো দুটি ব্যালটে এবং একটি ব্যালটে সদস্য পদগুলোতে ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়েছে। প্রায় চল্লিশ হাজার ভোটারের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন বলে ধারণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ভুলত্রুটি দেখলেও নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য বলছে না শিক্ষক নেটওয়ার্ক : ডাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু ছোটখাটো অসঙ্গতি ও ব্যবস্থাপনাগত ভুলত্রুটি থাকলেও ভোট গ্রহণযোগ্য না, এমনটা মনে হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের। গতকাল অনুষ্ঠেয় ডাকসু ভোট পর্যবেক্ষণ করার পর সন্ধ্যায় সিনেট ভবনে এক ব্রিফিংয়ে এ বক্তব্য এসেছে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে। সংবাদ সম্মেলনে দিনভর পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন শিক্ষক নেটওয়ার্কের সংগঠক, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।
পরে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের যেটা মনে হয়েছে যে, আমরা এই যে ছোটোখাটো যা দেখেছি অসঙ্গতি বা ব্যবস্থাপনার যে ভুলগুলো, এর বাদে আমরা মনে করিনি যে, বড় কোনো ধরনের অসঙ্গতি ছিল এবং নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না, এটা আমাদের কখনও মনে হয়নি।
আজও বন্ধ থাকবে ক্লাস–পরীক্ষা : ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের পরদিন আজ বুধবার ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন দফা সিদ্ধান্ত বদলের পর ভোটের দিন গতকাল রাতে ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ রাখার এ সিদ্ধান্ত জানানো হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
এদিকে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের দুই প্রার্থীর ব্যালটে আগে থেকে টিক দিয়ে রাখার অভিযোগে প্রশাসনের বিরুদ্ধে টিএসসিতে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল। রাতে ভোট গণনা চলাকালে খালি ব্যালটবঙ ভরে ফেলার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। ভোট গণনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে লোকজনের জমায়েত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ব্যক্তি পর্যায়ে অবস্থানকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তারা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন ডাকসুর ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা। ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের ভাষ্য, নীলক্ষেত, শাহবাগ, চানখারপুলে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়েছে। অপরদিকে শিবির প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদের অভিযোগ, নয়টি পয়েন্টে যুবদল এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা পাহারা দিচ্ছেন।
ঢাবির প্রবেশপথে ভিড় না করতে অনুরোধ পুলিশের : ডাকসু নির্বাচনের ভোট গণনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে লোকজন জমায়েতের খবরের পর কাউকে অযথা ভিড় না করতে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ এই জমায়েতকে উৎসুক জনতা বললেও তারা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন ডাকসুর ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিকাল থেকেই এই জমায়েত বাড়তে থাকে। শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও জটলা বাড়তে থাকায় সন্ধ্যার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জনবলও বাড়াতে দেখা যায়।
এদিকে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আবু বাকের মজুমদার। ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি পদপ্রার্থী সাদিক কায়েম একটি কেন্দ্রে সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে না দেয়ার অভিযোগ জানান নির্বাচনি কর্মকর্তাদের। ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছেন তিনি। এছাড়া ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের প্রবেশে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ডাকসুর ভোটে অব্যবস্থাপনা এবং ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।