ঢাকা নগরীতে চারজনের একটি পরিবারের অক্টোবর মাসের খাবারের হিসাব তুলে ধরে সিপিডি জানায়, মাছ ও কোনো প্রকার মাংস না খেলে ওই পরিবারকে মাসে খাবার কিনতে খরচ করতে হয় গড়ে ৯ হাজার ৫৯ টাকা। এর সঙ্গে মাছ ও মাংস যুক্ত হলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৪২১ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সংবাদ সম্মেলনে জনজীবনে মূল্যস্ফীতির বর্তমান চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এমন তথ্য দেয়। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এটা কম্প্রোমাইজ ডায়েট বা আপসের খাদ্যতালিকা। বেতন প্রতিবছর ৫ শতাংশ বাড়লেও সেটা ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বৃহস্পতিবার সিপিডি কার্যালয়ে ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ : উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক মিডিয়া বিফ্রিংয়ে বর্তমানে দেশে মোট সাত সমস্যা চিহ্নিত করে সংস্থাটি। সেগুলো হচ্ছে- ডলার সংকট, জ্বালানির দর, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, খাদ্য সংকটের শঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও কোভিড-১৯। এসব সংকট কাটাতে পণ্য আমদানিতে কর রেয়াত দেওয়া, ন্যূনতম বেতন বাড়ানো, উৎপাদন বাড়ানো, সারের উচ্চমূল্যের কারণে ভর্তুকি দেওয়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সমাধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেয় সিপিডি।
ফাহমিদা খাতুন জানান, বাজারে দৈনন্দিন অনেক পণ্যের মূল্য ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের দেওয়া গড় মূল্যস্ফীতি বাজারের চিত্র তুলে ধরছে না। সরকারের হিসাবেও এবার খাদ্য এবং খাদ্য বহির্ভূত উভয় খাতের পণ্যেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। সরকার আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫ এবং ৯ দশমিক ১ শতাংশ বললেও বাস্তবে আমরা বাজারে গেলে সেই চিত্রের সঙ্গে মিল পাই না। মূল্যস্ফীতি আরও বেশি বলে অনুভূত হয়, যোগ করেন তিনি।
ঢাকা নগরীতে একটি পরিবারের খাবারের খরচের তথ্য তুলে ধরে তিনি শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো এখন অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন। মূল্যস্ফীতির এমন চাপে শহরের পাশাপাশি দরিদ্র্যপ্রবণ এলাকার বিশেষ করে নয় জেলার দরিদ্র মানুষ এখন অনেক খারাপ সময় পার করছে বলে মন্তব্য করেন। গত মে ও জুনে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নয় জেলার প্রায় ৭০ লাখ মানুষ চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্য সংগ্রহে সংকটে পড়ছেন, বলেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আগামী বছর বিশ্বে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে উদ্ভূত সংকট এবং আগামী বছরে খাদ্য সংকটের আশংকা মোকাবিলা করতে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এর অংশ হিসেবে অর্থ, পরিকল্পনা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি। পণ্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে একচেটিয়াভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণকেও কারণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। দেশে কিছু পণ্যের দাম দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত ও মোন্তাসির কামাল উপস্থিত ছিলেন।