হাতে কখনো ডলার, কখনো রিয়াল, কখনো আবার অন্য কোনো দেশের মুদ্রা। টার্গেট ব্যক্তির কাছে গিয়ে না জানার ভান করে বলেন, এগুলো কোনো দেশের টাকা? এরপর জানতে চান, কীভাবে বিদেশি মুদ্রাগুলো বাংলাদেশি টাকায় ভাঙানো যাবে। এভাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। এরপর কম টাকাতে হলেও বিদেশি মুদ্রাগুলো ভাঙাতে চান তারা। আর লাভের আশায় প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে কম দামে (!) মুদ্রাগুলো কিনে নিজেই বোকা বনে যান ভুক্তভোগী। এভাবে বিশেষ কৌশলে বিদেশি টাকা দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে এমন একটি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত দুইজন হল, বরগুনার মো. আবু হানিফের ছেলে মো. জয়নাল আবেদীন (৩৪) ও কুমিল্লার মো. হুমায়ুন কবিরের ছেলে মো. জাহান হোসেন প্রকাশ সুমন (২৮)। এদের থেকে ৪০ হাজার টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত চারটি বিদেশি মুদ্রার নোট উদ্ধার করা হয়।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, অভিযোগকারী জুবায়ের মোহাম্মদ হোসেইন বুধবার সকাল ১০টার দিকে এনায়েতবাজার এলাকার এবি ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে রওনা দেন। নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় খোয়াজা হোটেলের সামনে এক সিএনজি টেক্সি চালক মো. জাহান হোসেন প্রকাশ সুমন তাকে ডাক দিয়ে প্রথমে কোথায় যাবেন ও টেক্সি লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করেন। এরপরই সুমন তার কাছে কিছু বিদেশি মুদ্রার নোট আছে বলে জানান এবং ওই টাকাগুলো কোথায় গিয়ে বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করা যাবে জানতে চায়। এর মধ্যে অন্য একজন এসে জানান এই নোটের দাম বাংলাদেশি টাকায় ২০ হাজার। তবে ১৫ হাজার হলে তিনি নোট কিনবেন। এক পর্যায়ে সুমন ওই ব্যক্তির কাছে দুটি নোটও বিক্রি করেন। এসব দেখে প্রলুব্ধ হয়ে জুবায়েরও চারটি বিদেশি টাকা ৬০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নেন।
ওসি বলেন, বাসায় গিয়ে জুবায়ের মোহাম্মদ হোসেইন তার ছেলেকে নোটগুলো দেখালে ছেলে জানায়, নোটগুলো ওমানের এবং বাংলাদেশী টাকায় সেগুলোর প্রতিটির মূল্য মাত্র ২২ টাকা। তিনি আবার কাজীর দেউড়ির মোড়ে আসেন এবং কর্তব্যরত এসআই ধর্মেন্দু দাশকে বিষয়টি জানান। পরে তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যালোচনা করে অভিযানে নামে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে স্টেশন রোড থেকে মো. জাহান হোসেন প্রকাশ সুমনকে গ্রেপ্তার ও পরে তার দেওয়া তথ্যে হালিশহর এলাকা থেকে জয়নাল আবেদীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জয়নালের ঘরে পুরনো একটি চায়ের ফ্লাস্কের ভেতর থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার জয়নাল আবেদীন ও জাহান হোসেন প্রকাশ সুমনকে আদালতে উপস্থাপন করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আগামী রোববার রিমান্ডের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
ওসি মহসীন বলেন, তারা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা একত্রিত হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিনব কায়দায় পথচারীকে বিভিন্ন বিদেশী নোট দেখায়। পথচারীরা উক্ত নোট ভাল করে দেখে বা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের চক্রের সদস্যরা নোটগুলো দামাদামি করতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের চক্রের এক সদস্য নোট ক্রয় করে নেয়, অপর সদস্য আরও বেশি দামে নগদ টাকা দিয়ে ক্রয় করে নেয়। এভাবে তারা পথচারীদের লোভনীয় দৃষ্টি তৈরি করে। একপর্যায়ে পথচারীর মাঝে ক্রয় করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এবঙ লোভের মুখে কেউ কেউ নোট ক্রয় করে ফেলে এবং অবশেষে প্রতারণার শিকার হয়।