দীর্ঘদিন দরে ভোগ্যপণ্যের বাজার চড়া। এরমধ্যে দেশের ইতিহাসে ডলারের রেকর্ড মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে। তবে ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকরা বলছেন, এর আগে গত ৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীদের এলসি বিভিন্ন ব্যাংকে (ঋণপত্র) নিষ্পত্তি করতে হয়েছে ৯৫ টাকায় পর্যন্ত। এক্ষেত্রে একেক ব্যাংক একেক দামে এলসি নিস্পত্তি করেছে। আবার অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে গড়িমসি করেছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। এলসি নিষ্পত্তিতে ডলারের এমন সমন্বয়হীনতার বিষয়টি নজরদারির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
গতকাল সোমবার দেশের অন্যতম বৃহৎতম ভোগ্যপণ্যের পাইকারী বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার বাড়ার সাথে সাথে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ভোগ্যপণ্যের বাজারের অশনি সংকেত বলছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সোমবার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে গিয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়। অন্যদিকে মসুর ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়, মুগ ডাল ৪ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৯ টাকায়, মটর ডাল ২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গম মণপ্রতি ১১০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪৮০ টাকায়। এছাড়া এলাচ কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৫৫০ টাকা, দারুচিনি ২০ টাকা কমে ৩৮৫ টাকা, লবঙ্গ ৮৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬৫ টাকা এবং জিরা ৪০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। অপরদিকে দীর্ঘ সময় ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি বন্ধের পর এর দাম বাড়তে থাকে। তবে সম্প্রতি বিকল্প দেশ মালয়েশিয়া থেকে পামের আমদানি বাড়ায় দামও কিছু কমতির দিকে রয়েছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে সয়াবিনের দাম। গতকাল খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ১০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে সয়াবিনের তেলের দাম। বর্তমানে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়।
জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ভোগ্যপণ্যের বাজার বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে একেক ব্যাংক একেক দরে এলসির পেমেন্ট নিচ্ছে। আমি ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ডলারের বিনিময়মূল্যে এলসি খুলে ব্যাংক আমার কাছ থেকে ৯ টাকা বেশি পেমেন্ট নিয়েছে। অর্থাৎ আমাকে এলসি নিষ্পত্তি করতে হয়েছে ৯৫ টাকায়। ব্যাংকগুলো তাদের খেয়ালখুশিমতো টাকা নিচ্ছে। এতে পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে তা ভোক্তাদের ওপর পড়বে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভোগ্যপণ্যের দামে প্রভাব পড়ছে। ব্যাংকগুলোর এলসি নিস্পত্তিতে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি নিয়ে আমি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের কাছে চিঠি লিখেছি। বিশেষ করে অত্যাবশকীয় ভোগ্যপণ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটু তদারকি করা দরকার। কারণ একেক ব্যাংক একেক রেটে এলসি নিস্পত্তি করছে, এটি মেনে নেয়া যায় না। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি করা দরকার।