ডলার কেনাবেচায় আবার অস্থিরতার পেছনে ঋণপত্রের অর্থ পরিশোধের চাপ, কিছু ব্যাংকের ভূমিকা, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধসহ বেশ কিছু কারণ তুলে ধরে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লিখিত এ ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের ঋণমান অবনমনের কারণে বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে দেশের ব্যাংকগেুলোর ‘লেনদেন সম্পর্ক’ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ‘ইউপাস এলসি’ খোলা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বলেও তুলে ধরা হয়। এতে করে ‘বিলম্বে অর্থ প্রদান’ করা সম্ভব হয়নি এবং অফশোর ব্যাংকিং ঋণের আন্তঃপ্রবাহও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। খবর বিডিনিউজের। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ঋণপত্রের বিল পরিশোধের চাপ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়েছে। ডলারের দাম বেড়ে মুদ্রাবাজার আবার অস্থির হওয়ার ক্ষেত্রে এটি ভূমিকা রেখেছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের কাছে লিখিত ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। এতে রেমিটেন্সের ডলারের দর ১২৮ টাকায় উঠে যায়। এ অবস্থায় ১৩টি ব্যাংকের বিদেশি এঙচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে উচ্চ দামে ডলার কেনার ব্যাখ্যাও চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে এসব ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে রেমিটেন্সে ১২৩ টাকা ওপর না দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ডলার দরে অস্থিরতার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লিখিত ব্যাখ্যায় বলা হয়, এজন্য কিছু ব্যাংককে দায়ি করার কথা বলা হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোর নাম তুলে ধরা হয়নি। এজন্য এসব ব্যাংককে ১২৩ টাকার উপরে রেমিটেন্স সংগ্রহ না করার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
লিখিত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আইএমএফের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক সামপ্রতিক সময়ে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে, যা আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলারের যোগান বাড়াতে ভূমিকা রাখেনি।
ডলার বাজারের এমন প্রেক্ষাপটে ডিসেম্বরের মধ্যে বৈদেশিক দেনা পরিশোধে ব্যাংকগুলোকে বিলম্ব না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
লিখিত ব্যাখ্যায় বলা হয়, রেমিট্যান্স আহরণে সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া ও মধ্যস্বত্বভোগী ভূমিকা বাজারে বিনিময়হারকে অস্থিতিশীল করেছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লেনদেনের তথ্যে (ইনফ্লো–আউটফ্লো) মিল না থাকার কারণেও ডলার বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা গেছে।
রেমিটেন্স ও রপ্তানিতে একই দর দেওয়ার নির্দেশ : এদিকে রেমিটেন্স ও রপ্তানিতে সব ব্যাংককে একই দর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এছাড়া ডলার কেনাবেচায় সর্বোচ্চ ব্যবধান (স্প্রেড) এক টাকা রাখার কথাও বলেছেন তিনি। এসব নির্দেশনা না মানলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জরিমানার মুখে পড়তে হবে বলে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ট্রেজারি প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সভায় অংশ নেওয়া একাধিক ব্যাংকার জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এ সভা হওয়ার তথ্য দিলেও নির্দেশনার বিষয়ে ‘অবগত নন’ বলে তুলে ধরেন।
বৈঠকে উপস্থিত একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, সামনে একটি সার্কুলার জারি করে এ নির্দেশনা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি করবে। তিনি বলেন, গভর্নর বলেছেন, রপ্তানি ও রেমিটেন্সে ডলার দর একই রাখতে হবে। অর্থাৎ আগে ব্যাংকগুলো রপ্তানির চাইতে রেমিটেন্সে বেশি দর দিত। তাই এখন থেকে দুইটাতেই একই দর দিতে হবে।
আরেক ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, তবে রেমিটেন্স ও ডলার দর কত হবে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দেয়নি।
চলতি বছর মে মাসে ডলারের বিনিময় পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়েছে ১১৭ টাকা হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা রাখার নির্দেশনা দেয়। তবে মাঝে কয়েক মাস ডলার বাজার স্থিতিশীল ছিল। তবে চলতি মাসে আবার ডলার দর বেড়ে ১২৮ টাকা ওঠে যায়। তাতে ডলার বাজার আবার অস্থিতশীল হয়ে পড়ে।