ডব্লিউটিসি ও আইভোয়াকের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ

নৌ বাণিজ্য দপ্তরে বৈঠক, আজ আসছেন ডিজি দুই মাস জাহাজ বরাদ্দ নৌ বাণিজ্য দপ্তর থেকে

হাসান আকবর | বুধবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটারেজ জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে জাহাজ মালিকদের দুটি গ্রুপের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী দুই মাস নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সিরিয়াল অনুসরণ করে লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দেয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা লাইটারেজ জাহাজ চলাচলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) থেকে আলাদা হয়ে ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক) গঠন এবং জাহাজ বরাদ্দ শুরু করলে জাহাজ মালিকদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের মধ্যে দুটি ডব্লিউটিসির ব্যানারে, অপরটি আইভোয়াকের ব্যানারে জাহাজ বরাদ্দ দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে থাকে। অভ্যন্তরীণ নৌ সেক্টরে দেখা দেয়া বিশৃঙ্খলা বন্ধ করে উভয় পক্ষকে একই প্ল্যাটফরম আনার উদ্যোগ নেয়া হলো।

গতকাল আগ্রাবাদে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে পিও এমএমডির অফিস থেকে সিরিয়াল রক্ষা করে জাহাজ বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। দুই মাসের কার্যক্রম মনিটরিং করার পর আইনগত দিক পর্যালোচনা করে নতুন একটি প্ল্যাটফরম তৈরির মাধ্যমে লাইটারেজ জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনা হবে। একই সাথে চট্টগ্রাম বন্দর ও বিআইডব্লিউটিএর প্রতিনিধিকেও এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আজ বুধবার নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চট্টগ্রাম এসে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসে বড় বড় মাদার ভ্যাসেল। এর মধ্যে যেগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না সেগুলোকে বহির্নোঙরে অবস্থান করে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করতে হয়। অনেক সময় বন্দরের জেটিতে বার্থিং নেয়া জাহাজের ওভার সাইড থেকেও এসব জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাট ছাড়াও দেশের ৩৬টি নৌঘাটে নেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙর থেকে দেশব্যাপী পণ্য পরিবহনে প্রায় ১৮শ লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজের মালিকেরা তিনটি পৃথক সংগঠনের সদস্য। তিন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বছর দশেক আগে গঠন করা হয় ডব্লিউটিসি। এই সেল চট্টগ্রাম থেকে দেশব্যাপী লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন (বিসিভোয়া), কোস্টাল ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন (কোয়াব) ও ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চিটাগাংয়ের (আইভোয়াক) নেতৃবৃন্দ ডব্লিউটিসির নেতৃত্বে থাকেন। ডব্লিউটিসির সিরিয়ালভুক্ত হয়ে জাহাজ বরাদ্দ এবং পরিচালনা করে আসার ধারাবাহিকতায় অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। সাড়ে ৬শ কোটির বেশি টাকা আটকে ফেলার একটি বিষয় সামনে আসে। এই টাকা পরিশোধ করা না হলে ডব্লিউটিসি একাধিক জাহাজ মালিককে (একইসাথে পণ্যের এজেন্ট) জাহাজ বরাদ্দ দেয়া বন্ধ করে দেয়। বিরোধের মধ্যে ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চিটাগাং ডব্লিউটিসি থেকে বেরিয়ে আলাদা সেল গঠন করে এবং জাহাজ বরাদ্দ প্রদান ও পরিচালনা করতে শুরু করে।

বিষয়টি নিয়ে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে বৈঠক হয়। দীর্ঘ বৈঠক শেষে জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনার জন্য নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গতকাল চট্টগ্রাম পিও এমএমডির কার্যালয়ে বৈঠকে বসে। বৈঠকে উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। জাহাজ মালিক এবং পণ্যের এজেন্টের প্রতিনিধিরাও যোগ দেন। বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা শেষে আগামী দুই মাস ডব্লিউটিসি বা আইভোয়াক আলাদাভাবে কোনো জাহাজ বরাদ্দ না দিয়ে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জাহাজ বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। উভয় সেলই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবগুলো জাহাজের তালিকা পিও এমএমডি কার্যালয়ে জমা দেবে। ওখান থেকে সিরিয়ালি জাহাজ বরাদ্দ এবং পণ্য পরিবহন করা হবে। দুই মাসের মধ্যে সবার গ্রহণযোগ্য একটি সিস্টেম গড়ে তোলার পর ব্যাপারে আশাবাদী সবাই।

ডব্লিউটিসির কোকনভেনর একেএম শামসুজ্জামান রাসেল আজাদীকে বলেন, দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। আমরা পিও এমএমডির প্রস্তাব মেনে নিয়েছি। আগামী দুই মাস একই সিরিয়াল থেকে জাহাজ বরাদ্দ দেয়া হবে। আশা করি, দুই মাসের কার্যক্রমের ওপর ভালো কিছু হবে।

অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ডব্লিউটিসির সাড়ে ৬শ কোটির বেশি টাকা গুটিকয়েক মানুষ আটকে রেখেছে। মূলত ওই টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেয়ায় বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা। আজকের বৈঠকে টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সাধারণ জাহাজ মালিকদের এই টাকা উদ্ধারের জন্য নিশ্চয় পিও এমএমডি উদ্যোগ নেবেন।

আইভোয়াকের মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ বলেন, আজকের মিটিংয়ে পিও এমএমডি যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। ইতোমধ্যে ২৫ দিনে আমরা ৭৪৯টা জাহাজ বরাদ্দ দিয়েছি। আমাদের কার্যক্রম যথাযথভাবে চলছিল। জাহাজ মালিক এবং আমদানিকারকেরা আমাদের ওপর আস্থাশীল। তবু পুরো সেক্টরের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা পিও এমএমডির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছি। উনার অফিস থেকে একই সিরিয়ালে জাহাজ পরিচালনা করতে আমাদের সম্মতির কথা জানিয়ে দিয়েছি।

তিনি বলেন, এই উদ্যোগের ফলে নৌ সেক্টরের সামগ্রিক কল্যাণ হবে এবং পিও এমএমডির তত্ত্বাবধানে একটি নিরপক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, অধিকারমূলক কমন প্ল্যাটফর্ম থেকে লাইটারেজ জাহাজ পরিচালিত হবে।

নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ আজাদীকে বলেন, আগামী মঙ্গলবার থেকে আমাদের অফিস থেকে লাইটারেজ জাহাজের বরাদ্দ দেয়া হবে। জাহাজ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। সৎভাবে কাজ করলে কারো কোনো অভিযোগ থাকবে না। চট্টগ্রাম বন্দর এবং বিআইডব্লিউটিএর প্রতিনিধিকেও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তাহলে এক্ষেত্রে আরো বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।

তিনি বলেন, আজ ডিজি (শিপিং) মহোদয় চট্টগ্রাম আসছেন। তিনিও বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। আমরা চাই লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হোক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবশেষে সচল হলো এনজিওগ্রাম মেশিন
পরবর্তী নিবন্ধহাছান মাহমুদকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী