ঠিকাদার ওরা ২৪ জন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

গত প্রায় ১০ বছরে অন্তত ৪০ দফা মেয়াদ বেড়েছে। তবুও টেন্ডার হয়নি চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য পরিবহন ঠিকাদারের। মাত্র ২৪ জন ঠিকাদার লাখ লাখ টন খাদ্যশস্য পরিবহনের ব্যবসা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। ১০ বছর আগের দরেই খাদ্যশস্য পরিবহনের কার্যক্রম চলে। বছর বছর টেন্ডার হলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ, প্রতিযোগিতামূলক দর কিংবা দর বাড়ার সুযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে টেন্ডার প্রক্রিয়া ধামাচাপা দেয়া হয় নানা কৌশলে। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম জেলার খাদ্যশস্য পরিবহন কাজে ‘ওরা ২৪ জনের’ নাম থাকলেও কার্যত এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন মাত্র ৪ জনের একটি সিন্ডিকেট। খাদ্য বিভাগের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এই চক্রের সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ। একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে খাদ্যশস্য পরিবহনের এ চিত্র উঠে এসেছে।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর এবং সাইলো থেকে হালিশহর এবং দেওয়ানহাট সিএসডি ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিবছর লাখ লাখ টন খাদ্যশস্য পরিবহন করা হয়। সরকারিখাতের বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য পরিবহনের জন্য খাদ্য বিভাগ ঠিকাদার নিয়োগ করে থাকে। চট্টগ্রাম জেলায় খাদ্যশস্য পরিবহনের জন্য ২৪জন ঠিকাদার রয়েছেন। ২০১২ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে এ ঠিকাদারদের নিয়োগ করা হয়। এক বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া পরিবহন ঠিকাদারদের মেয়াদ পরের বছরই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ওই ২৪টি লাইসেন্সের ক্ষেত্রে তা হয়নি। প্রতি তিনমাস পরপর এগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ হিসাবে ১০ বছরে মেয়াদ বেড়েছে ৪০ বার।

২০১২ সালের টেন্ডারে উল্লেখিত ‘দরেই’ ঠিকাদারেরা পণ্য পরিবহন করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহন না করেই সরকার থেকে বিল আদায় করা হয়। প্রতি মাইলের ভাড়া হিসেবে বিল আদায় করা হয়। প্রচলিত নিয়মে চট্টগ্রামের হালিশহর কিংবা দেওয়ানহাট সিএসডি থেকে মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ কিংবা অন্যান্য উপজেলায় খাদ্যশস্য পৌঁছে দেয়ার পরই মাইল হিসেবে বিল আদায় করার কথা। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো অধিকাংশ খাদ্যশস্য নগরীর পাহাড়তলী এবং খাতুনগঞ্জে বিক্রি করে দেয়া হয়। এ রকম ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের সাথে জড়িত লোকজন খাদ্যশস্যের পরিবর্তে নগদ টাকা গ্রহণ করেন। এ সব খাদ্যশস্য প্রচলিত বাজারদরের চেয়ে কম দামে কিনে নেন পরিবহন ঠিকাদারের সিন্ডিকেট। আবার গন্তব্যে গাড়ি না পাঠিয়ে সরকার থেকে একেবারে ভুয়া বিলও আদায় করেন। বছরের পর বছর ধরে খাদ্যশস্য পরিবহন নিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ।

সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি নগরীর একটি হোটেলে বৈঠক করে চলতি এ ঠিকাদারদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আইআরটিসি’ লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২৪ প্রতিষ্ঠানগুলো হলজয় কনস্ট্রাকশন, মেসার্স হোসেন আহমদ, মেসার্স মজুমদার ট্রেডার্স, মেসার্স হাসান এন্ড কোম্পানি, এ জেড কবির এন্ড কোম্পানি, মেসার্স আসাদ ট্রেডিং, মেসার্স হাসান এন্ড কোম্পানি, মেসার্স নুরজাহান এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রাজ্জাক এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রাজিয়া এন্ড সন্স, মেসার্স কাউছার এন্ড সন্স, ফরচুর ট্রেড ইন্টারন্যশনাল, হিমায়ুস সী ফুডস, তানজিলা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আলম ট্রেডার্স, শাহনেওয়াজ এন্টারপ্রাইজ, সাফওয়ান এন্টারপ্রাইজ, মুন্নী এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স মনি ট্রেডার্স, এসকে ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, মেসার্স সোনিয়া এন্টারপ্রাইজ, ছিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আবু আহমেদ এবং জুয়েল ট্রেডার্স। লাইসেন্সগুলো পৃথক পৃথক নামের হলেও এগুলোর মধ্যে ৯ টি ‘ম’ আদ্যক্ষরের এক নেতা, ৪ টি ‘ব’ আদ্যক্ষরের একজন, ৩ টি ‘র’ আদ্যক্ষরের একজন, দুইটি ‘জ’ আদ্যক্ষরের একজন নিয়ন্ত্রণ করেন। বাকি ৬ প্রতিষ্ঠান নিজেদের লাইসেন্স নিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে গত প্রায় এক যুগ ধরে।

গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে টেন্ডার আটকে থাকায় উপরোক্ত ২৪টি প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কারো পক্ষে পরিবহন ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ডিসি (ফুড) আবদুল কাদেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০১২ সালে শেষ টেন্ডার হয়েছিল কিনা তা আমার স্মরণ নেই। তবে বেশ আগে যে ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার হয়েছিল তা সত্য। নানা ধরনের ঝামেলায় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা আগামী কিছুদিনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করবো।

বিষয়টি নিয়ে ডিআরটিসি’র সভাপতি এবং আইআরটিসি নেতা সৈয়দ মাহমুদুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কে যে আপনাদের এসব বলে! তিনি ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে দাবি করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধইসি গঠনের বিল পাসের জন্য সংসদে উঠছে আজ