ঠান্ডায় বেড়েছে শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া

সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ঠান্ডায় আচ্ছন্ন সারা দেশ। এই ঠান্ডায় শিশুদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্রঙ্কিউলাইটিস (শ্বাসকষ্ট) ও ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। এছাড়া নিউমোনিয়া তো আছেই। এসব রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বলে বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সূত্র জানিয়েছে। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রঙ্কিউলাইটিস, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া, সবক’টি রোগই ভাইরাসজনিত। তবে নিউমোনিয়ার প্রকোপ শিশুদের মাঝে সারা বছর কম-বেশি দেখা গেলেও ব্রঙ্কিউলাইটিসের প্রকোপ তেমন থাকে না। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সময় আরএসবি (রেসপিরেটরি সিনসেটিয়াল ভাইরাস) ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত এই রোগটির প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যায়। আর ঠান্ডায় যোগ হয়েছে ভাইরাল ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ। ভাইরালজনিত এসব রোগে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এ নিয়ে অভিভাবকদের সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকের পরামর্শ : ঠান্ডায় প্রি-ম্যাচিউরড (নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া) শিশু ও অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর শরীরের তাপমাত্রা/উষ্ণতা স্বাভাবিক রাখা জরুরি বলছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাসির অভিভাবকদের পরামর্শ দেন, ঠান্ডায় শিশুর মাথায় হালকা টুপি এবং হাতে-পায়ে মোজা পরাতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। কোনোভাবেই আগুনের ধোঁয়া জাতীয় কিছু দিয়ে শিশুর শরীরের উষ্ণতা বাড়ানোর চেষ্টা করা যাবে না। ঘরের বাইরে গেলে বড়দের যে পরিমাণ শীতের কাপড় প্রয়োজন হয়, শিশুকেও যেন একই ধরনের কাপড় পরানো হয়। খুব বেশি যাতে পরানো না হয়। আর শিশুকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে বেশি বেশি মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়ানো চলবে না। এখন যেহেতু ভাইরাল ডায়রিয়া, সেহেতু আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। এসব রোগে আক্রান্ত হলে শিশুকে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন তিনি।
এসব রোগে আক্রান্ত হলেও আতংকের কিছু নেই বলছেন চসিক পরিচালিত মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (শিশু স্বাস্থ্য) ডা. সুশান্ত বড়ুয়া। শিশুর মা-বাবাদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, অনেকেই বেশি ঠান্ডায় শিশুকে গোসল করাতে চান না। এটা কিন্তু ঠিক নয়। শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। প্রয়োজনে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে।
শিশুর মাথার টুপি এবং হাত-পায়ের মোজা রোদ ওঠার সাথে সাথে খুলে ফেলতে হবে। বিছানায় শুইয়ে রাখার সময়ও যাতে অতিরিক্ত শীতের কাপড় পরানো না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ শিশুর শরীরে ঠান্ডা যেমন লাগতে দেয়া যাবে না, আবার অতিরিক্ত কাপড় পরানোর ফলে শিশুর শরীরে যেন ঘাম বের না হয়। আর শিশুকে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে অন্য সময় দৈনিক ৪ থেকে ৫ জন শিশু শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হতো। কিন্তু কিছুদিন ধরে এই রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তির হার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ওয়ার্ডে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ শিশু রোগী ভর্তি হলে এখন এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ জনে।
সরেজমিনে ওয়ার্ডটিতে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের তিনটি সাধারণ ইউনিটে মোট ৬৫ শয্যার বিপরীতে দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছে। বিশেষ চারটি ইউনিটসহ শিশু ওয়ার্ডের মোট ১৩২ শয্যার বিপরীতে গতকাল প্রায় আড়াইশ শিশু রোগী চিকিৎসাধীন ছিল বলে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। ভর্তিকৃতদের মাঝে ব্রঙ্কিউলাইটিস, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানান ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।
শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালেও। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করানো হয় না। কিন্তু গতকাল ২৬০ জনের বেশি শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে বলে জানান হাসপাতালটির শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ডা. আবু সাঈদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ভর্তি রোগীদের মাঝে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ভাইরাসজনিত এ রোগে আক্রান্ত প্রায় শতাধিক শিশু বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি শিশুরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঠান্ডায় এবং ঋতু পরিবর্তনের ফলে শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেশ কিছুদিন ধরে বেড়েছে বলে জানান তিনি।
ঠান্ডাজনিত প্রায় সবক’টি রোগই ভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকে জানিয়ে ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ঋতু পরিবর্তন, ঘর স্যাঁতস্যাঁতে, অপরিষ্কার থাকা, ঠান্ডা-গরমের মিশ্র আবহাওয়া ও ঠান্ডাজনিত কারণে শিশুদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া আক্রান্ত শিশুর হাঁচি থেকেও ব্রঙ্কিউলাইটিস রোগটি সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। মূলত এসব কারণেই আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। এ রোগের লক্ষণ হিসেবে হঠাৎ কাশি বেড়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া ও অল্প অল্প জ্বরের সাথে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। আর এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে ঘর ও শিশুকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, শিশুর নাক পরিষ্কার রাখা এবং শিশুর শরীরে ঠান্ডা লাগতে না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া কিংবা নিউমোনিয়া দেখা দিলে দেরি না করে শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমপি পার হবেন তাই…
পরবর্তী নিবন্ধমহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় ২৭০০ কোটি টাকার আরও দুই প্রণোদনা