ট্র্যাজেডি শুনলেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। চোখ রাখি খবরে। এক রাশ মায়া মমতা, সহমর্মিতা, সমবেদনার জল ধরে রাখা কঠিন। মানুষ তো আমরা।একের পর এক ট্র্যাজেডি ঘটেই যাচ্ছে। চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি, নিমতলী ট্র্যাজেডি, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি, সমপ্রতি ভয়াবহ সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি। আর এর মধ্যে কত যে দুর্ঘটনা বা ট্র্যাজেডি ঘটেছে, ঘটছে তার ইয়ত্তা নেই। আজ কড়াইল বস্তিতে আগুন তো কাল মহাখালী বস্তিতে আগুন, আজ জুতার কারখানায় আগুন তো কাল শপিং মলে আগুন.. এই আগুনের লেলিহান শিখায় কত জীবন, মাল যে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তার হিসাব রাখা কঠিন। ইথারে ইথারে ভেসে বেড়াচ্ছে নিহত এবং আহত স্বজনদের আর্তনাদ। কি মর্মান্তিক! কি নির্মম! কি নিষ্ঠুর! এই সুন্দর পৃথিবী। লেবানিজ-আমেরিকান লেখক কাহলিল জিবরান বলেছেন, ‘দুর্ঘটনা প্রায় প্রতিটি মানুষের জন্যই একটি অদৃষ্টপূর্ব জিনিস যা নিমিষেই তাদের জীবনে বিপর্যয় নিয়ে আসে’। দুর্ঘটনা মানেই দুঃস্বপ্ন। যাদের জীবনে ঘটে, তারা ছাড়া অন্যরা এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারে না। আমরা বাইরের মানুষেরা আহা! উহা! আহাজারি করে সমবেদনা জানাতে পারি অথবা প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারি কিছুটা।
এক একটা জীবন একক নয়। তার সাথে জড়িয়ে আছে অনেকগুলি জীবন, পরিবার। সাধারণ দুটো ডাল ভাত খেয়ে শান্তিতে বাঁচতে চান সবাই। কর্তব্যের খাতিরে ছুটে যান কোনো দুর্ঘটনা শুনলে। মরণ তো স্বাভাবিক যাত্রা। তবে দুর্ঘটনাজনিত এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কারোই কাম্য নয়। এটাই কি তাদের ভবিতব্য ছিলো? তাদের নিয়তি ছিলো?
এর জবাব পাওয়া কঠিন। কে দোষী, তদন্ত করা হবে প্রতিবেদনও পেশ করা হবে একদিন। তার পর… তার আর পর নেই… নেই কোনো ঠিকানা.. একদিন আমরা সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি ভুলে যাব। যেমন ভুলে গিয়েছি অন্য সব ট্র্যাজেডি। নতুন কোনো ট্র্যাজেডি শোনার ভয়ে ভয়ে থাকবো। কিন্ত ভুক্তভোগীরা?
যারা নিহত হন, তারা তো বেঁচে যান জীবন থেকে চলে যেয়ে। কিন্ত নিহতদের আত্মীয়স্বজন, আর আহত হয়ে যারা বেঁচে থাকেন তারা সারা জীবনভর পলে পলে দগ্ধ হন। এই আগুন সারা জীবন তাদের পোড়াতেই থাকে, যতদিন তারা বেঁচে থাকেন। এই পোড়া শুকায় না, এই পোড়া শুকানোর কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। পুড়তে পুড়তে কয়লা হয়ে তারাও নিঃশেষ হয়ে যান একদিন।