চলতি বছরের জুনে শেষ হচ্ছে আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেলপথ নির্মাণকাজ। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ হলে তখন ঢাকা–চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার পুরোটাই ডাবল লাইনে উন্নীত হবে। আর তখন চট্টগ্রাম–ঢাকা রুটে ট্রেন যাত্রার সময় কমে আসবে প্রায় আধ ঘণ্টা (৩০ মিনিট) থেকে পৌনে এক ঘণ্টা পর্যন্ত।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন আজাদীকে বলেন, আগামী জুনে ঢাকা–চট্টগ্রাম রেল লাইনের ‘লাকসাম–আখাউড়া ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন’ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তখন ঢাকা–চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার পুরোটাই ডাবল লাইনে উন্নীত হবে। এতে ট্রেন যাত্রার সময় কমে আসবে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো। তবে ঢাকা–চট্টগ্রাম রেল লাইনের পুরোটাই ডাবল লাইন হলেও পুরোটাই ব্রডগেজ নয়। শুধুমাত্র লাকসাম–আখাউড়া ৭২ কিলোমিটার ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পুরো রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে এ রেললাইনের (ঢাকা–চট্টগ্রাম) ২৫৩ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ লাইনে উন্নীত হয়েছে। বাকি ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করার জন্য ‘লাকসাম–আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পটি’ গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগামী জুনের মধ্যে এ অংশটিও ডুয়েলগেজ–ডাবল লাইনে উন্নীত করার লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে নির্মাণ কাজ চলছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। এরপর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের নভেম্বরে। এ প্রকল্পের নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পায় সিটিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার। এটি চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ম্যাঙ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ একটি কোম্পানি। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও তা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই দফায় এক বছর করে বাড়ানো হয়। মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হলেও কাজ শেষ হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পটির ৭৮ শতাংশ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে রেলওয়ের অপর একটি সূত্র বলছে, প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হতে পারে। পাশাপাশি ৪০০ কোটি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
দেশে ট্রেন পরিচালনার শুরু থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলে ব্রডগেজ ট্রেন চললেও পূর্বাঞ্চলে ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন না থাকায় ব্রডগেজ ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হয়নি। উভয় অঞ্চলে ব্রডগেজ ট্রেন পরিচালনায় পুরো পূর্বাঞ্চল রেলে ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন স্থাপনের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।