ট্রেন ও বাস স্টেশন সুনসান, এবারও হবে না ঈদযাত্রা

পরিবহন শ্রমিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৪ মে, ২০২১ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ট্রেন ও বাস স্টেশন নীরব-নিস্তব্ধ। নেই কোন কোলাহল, টিকিট বিক্রির হাঁকডাক। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে গত বছরের মতো এবারও ঈদযাত্রার অগ্রিম প্রস্তুতি নেই টিকিট কাউন্টারগুলোতে। প্রতিবছর (গত বছর ছাড়া) ঈদের আগ মুহূর্তের এই সময়ে ট্রেন ও বাস স্টেশনগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকতো না। তিনবেলাই ছিল টিকিটের জন্য মানুষের ভিড়। লোকে লোকারণ্য থাকতো চট্টগ্রাম রেল স্টেশন। কিন্তু এমন চিরাচরিত রূপ হারিয়ে গেছে করোনার ছোবলে। নিস্তব্ধ হয়ে আছে স্টেশনসহ আশপাশের এলাকা। প্লাটফর্মের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে অনেক বাস্তুুহারা। আশপাশে সুনসান নীরবতা। ২৯ রোজা হলে আগামী ১৩ মে আর ৩০ রোজা হলে ১৪ মে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। সে হিসাবে ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র ৯ বা ১০ দিন। করোনাকালের আগের বছরগুলোতে ঈদের ৯/১০ দিন আগে বাস এবং ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির ধুম পড়ে যেতো। রেল স্টেশনে অগ্রিম টিকিটের জন্য রাত জেগে যাত্রীরা অবস্থান নিতেন। দূর পাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে ভোর না হতেই ভিড় লেগে থাকতো। কিন্তু এখন সব স্টেশন নীরব-নিস্তব্ধ। গত বছরের মতো এই বছরও করোনার কারনে ঈদে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। শুধুমাত্র জেলার মধ্যে বাস চলাচল করতে পারবে। আন্তঃ জেলার বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। এই কারনে পরিস্কার হয়ে গেছে যে এবারও ঈদে কোন ট্রেন চলাচল করছে না। তাই নেই ঈদ প্রস্তুতিও।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত আজাদীকে জানান, ঈদে ট্রেন চালানোর মতো আমাদের প্রস্তুতি আছে। চলার সিদ্ধান্ত দিলে চালাতে পারবো। কিন্তু লকডাউন ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সুতরাং এবারেও ট্রেনে ঈদ যাত্রা হবে না।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের পথগুলো ফাঁকা। পুরো স্টেশন জুড়ে শুধু স্টেশন ম্যানেজার, মাস্টার এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ছাড়া আর কেউ নেই। পার্শ্ববর্তী স্টেশন রোড়ে দূরপাল্লার বাস কাউন্টার গুলোতেও একই চিত্র। কাউন্টার বন্ধ। একই চিত্র নগরীর কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল এবং দামপাড়াস্থ আন্তঃজেলা এসি বাস কাউন্টার গুলোতেও।
কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে বাস হেলপার মো. সৈকত ও সাদ্দাম হোসেনের সাখে কথা হলে তারা জানান, ৫ এপ্রিল থেকে গত একমাস ধরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমরা খুব কষ্টে আছি। আমাদের মতো শ্রমজীবী মানুষের এক মাস বসে খাওয়ার মতো অবস্থা নেই। এটা চিন্তাও করা যায় না। আমাদের পরিবারের লোকজনও না খেয়ে আছে। গত বছরও ঈদুল ফিতরে বাস চলেনি। এবারও বাস চলাচল করবে না বলে সরকার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা বাঁচবো কেমন করে! বাস না চললে মালিক বেতন কোত্থেকে দেবেন প্রশ্ন করেন পরিবহন শ্রমিক সাদ্দাম হোসেন।
দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারনে সরকার প্রথম দপায় ৫ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ২২ এপ্রিল এরপর ৫ মে এবং সর্বশেষ ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয় লকডাউন। ফলে এবারের ঈদেও দূর পাল্লার বাস না চলার ঘোষণায় মো. সৈকত ও সাদ্দাম হোসেনের মতো অসংখ্য পরিবহন শ্রমিকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিকের দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে দশ নমুনার ৬টি ইউকে তিনটি আফ্রিকার ধরন