একটা একটা করে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। ট্রেনে করে কক্সবাজারে যাওয়ার স্বপ্ন অনেক দিনের। সেই স্বপ্নও পূরণ হচ্ছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন দিনদিন উন্নত হচ্ছে, তেমনি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে রেললাইন নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও শত বছরের পুরোনো হলেও তা অগ্রসর হয়েছে সন্তোষজনকভাবে। জানা যায়, ৯০ বছর আগে রেললাইন নির্মাণ করা হলেও তা দোহাজারীতে গিয়ে থেমে যায়। বর্তমান দোহাজারী–কক্সবাজার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, পর্যটননগরী কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স–এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা। এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। বহুল আকাঙ্ক্ষিত নব নির্মিত দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথে আগামী ১১ নভেম্বর ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে এই রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে আগামী ৭ নভেম্বর।
দৈনিক আজাদীতে ৩ নভেম্বর প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ১১ নভেম্বর কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন শেষে আইকনিক স্টেশন দেখবেন। এরপর সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন বলেও জানান দোহাজারী–কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী মহেশখালী উপজেলা সদরে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়ও বক্তব্য দেবেন। ১১ নভেম্বর উদ্বোধনের পর এই রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে ১ ডিসেম্বর থেকে। এ রুটে দুটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব থাকলেও, ঢাকা থেকে প্রথমদিকে দিনে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলবে। এটির সত্যতা নিশ্চিত করে মহাপরিচালক কামরুল আহসান জানিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে এ রুটে ট্রেন বাড়বে। দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপন হবে।
রেলওয়ে মহাপরিচালকের কার্যালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, দিনে একটি ট্রেন ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিয়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় যাত্রা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় ফিরবে। ফিরতি পথেও চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করবে। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে ট্রেনটির।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেনে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন বলেন, এখন একটু সময় বেশি লাগবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার আমরা এখন পূর্ণগতিতে চালাব না। ৫০–৬০ কিলোমিটার গতিতে চালাব। মাস দুয়েক পরে ৮০ কিলোমিটার গতিতে চালাব। এখন হয়ত আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা লাগবে। চট্টগ্রাম থেকে পরে সেটা ২ ঘণ্টায় করতে চাই। বর্তমানে ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। সেই হিসাবে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যেতে ৭ ঘণ্টার মতো সময় প্রয়োজন হবে। ট্রেনে দুটি খাবার বগি, একটি পাওয়ার কার, তিনটি এসি কেবিন, পাঁচটি এসি চেয়ার, ছয়টি শোভন চেয়ার এবং একটি নন–এসি ফার্স্ট সিট বগি থাকবে। ঢাকা থেকে যাত্রার সময় আসন সংখ্যা হবে ৭৯৭টি। ফিরতি পথে আসন হবে ৭৩৭টি।
কক্সবাজারকে নিয়ে সরকার বড় রকমের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতি সমপ্রতি বলেছেন, তার সরকার ইতোমধ্যে কক্সবাজারে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এরমধ্যে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্ট মার্টিনসহ বিভিন্ন দ্বীপাঞ্চলের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, আজকে মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর যেমন তৈরি হচ্ছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠায় বিনিয়োগ হচ্ছে। একে একটি ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই মহেশখালীর উন্নয়ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিস্ময়ের সৃষ্টি করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি টেকনাফে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে এর সমুদ্র সৈকতও যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা–কক্সবাজার– নতুন এই রেলপথ নির্মিত হওয়ায় ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারে দ্রুতগতির ট্রেন চলতে পারবে। এটি সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। তাই বলা যায়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।