আরব দেশগুলোতে চালানো সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফলে বেরিয়ে এসেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেন- কেউই মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার জন্য ভাল হবেন না। জরিপ গবেষণা সংস্থা ইউগভ এবং সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত দৈনিক আরব নিউজের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক এই মত ব্যক্ত করেছেন। বাকি অর্ধেকের ৪০ শতাংশ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার জন্য বাইডেন বেশি উপযুক্ত এবং ১২ শতাংশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভাল মনে করছেন।
অনলাইনে গত মাসে মধ্যপ্রাচ্যের ১৮ দেশে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপের শিরোনাম ছিল- ‘আরবরা কী চাইছেন?’ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে বর্তমান রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট প্রাথী জো বাইডেন কেউই দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে জনপ্রিয় বলে বিবেচিত হননি। তবে তারা সামান্য এগিয়ে রেখেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে। মূলত, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটি পছন্দ করেননি জরিপে অংশ নেয়া ৮৯ শতাংশ মানুষ। তবে ইরাক এবং ইয়েমেনের মানুষ পছন্দ করেছেন ট্রাম্পকে। তারা মনে করছেন, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়াসহ অন্যান্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প- যেটা তারা সমর্থন করেছেন। জরিপে অংশ নেয়া ইরাকিদের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ বলেছেন, এ বছরের গোড়ার দিকে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড এর নেতা জেনারেল কাশেম সোলেইমানিকে হত্যা করার মার্কিন সিদ্ধান্তকে তারা অনুমোদন করেন। অন্যদিকে, সিরিয়ার ঠিক একই সংখ্যক মানুষ অর্থাৎ ৫৭ শতাংশ বলেছেন, তারা এই সিদ্ধান্তের বিরোধী।
জো বাইডেন ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ওবামার শাসনামলে হোয়াইট হাউসে আট বছর কাজ করেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ওই প্রশাসন সম্পর্কে তাদের কী মতামত। উত্তরদাতারা বাইডেন সম্পর্কেও তেমন উৎসাহ দেখাননি। অধিকাংশই বলেছেন, ওবামা তার সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর দেননি এবং তাদের জন্য তিনি তেমন কিছুই করেননি। তারা বলেছেন, বাইডেন যদি নির্বাচিত হন, তারা আশা করবেন তিনি ওবামার নীতি থেকে দূরে থাকবেন। তিনি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করবেন। যদিও এই জরিপে হস্তক্ষেপের কোন ঘটনাই ঘটেনি, তবু এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যাদের সহযোগিতায় এই জরিপ চালানো হয়েছে তারা হলো সৌদি আরবের রিয়াদভিত্তিক দেশটির রাষ্ট্রমালিকানাধীন দৈনিক আরব নিউজ এবং এই সংবাদমাধ্যম, অনুমোদিত সরকারি সম্পাদকীয় নীতিমালা মেনে কাজ করে থাকে।
সৌদি আরব ওই অঞ্চলে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ইরানের সাথে ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদনের জন্য সৌদি নেতৃত্ব কখনও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ক্ষমা করেনি। ট্রাম্প পরে এই চুক্তি থেকে বেরিযয়ে আসেন এবং আরও কঠোর পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জারি করেন। একই সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণাও দেন ট্রাম্প।
ওবামার শাসনামলে করা ওই চুক্তির সমালোচক ছিলেন সৌদি নেতারা। তাদের যুক্তি, ইরানের প্রভাবশালী নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি গড়ে তোলার জন্য উপসগরীয় এলাকায় গোপন ও বিশেষ অভিযান চালানোর জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে একটা আগ্রাসী নীতি চালু রাখার পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে, যে অর্থ দেশটির ব্যয় করা উচিত মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য।