তিন মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএইডে’র অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট কোনো দেশের জন্য প্রযোজ্য না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, না, এটা কান্ট্রি–স্পেসিফিক না।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রায় সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম ৯০ দিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এর মধ্যে যাচাই–বাছাই ও পর্যালোচনার পর অর্থায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই নির্বাহী আদেশে। এরপর বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহায়তার কার্যক্রম রয়েছে, সেসব বন্ধ রাখার কথা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়েছে ইউএসএইড। খবর বিডিনিউজের।
অর্থায়ন বন্ধের বিষয়ে সরকার কোনো বার্তা বা চিঠি পেয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি এটার উত্তর এখন দিতে পারব না। কারণ, আমার কাছে এরকম কোনো কাগজ এখনও আসেনি। তবে এটাতো ইতোমধ্যে পত্রিকায় চলে এসেছে, তারা সব ধরনের ফান্ডিং আপাতত ৯০ দিনের জন্য বন্ধ রাখছে। এটা মোটামুটি কিন্তু প্রত্যাশিত ছিল। উনি (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প) কিন্তু নির্বাচনের আগে থেকে বলছিলেন, এগুলো বিবেচনা করবেন, নতুন করে দেখবেন। তারা বিবেচনার জন্য সময়টা নিয়েছে এভাবে তো বলেছে। ধরে নেওয়া যায়, এ ধরনের তহবিল কমবে, এটা তো সবাই আশঙ্কা করছিল।
রোহিঙ্গাদের জন্য বার্ষিক যে আর্থিক সহায়তা বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা দিয়ে থাকে, তাতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের অগাস্টে রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২৫০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে দিয়েছে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধ হয়ে গেলে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর বড় রকমের প্রভাব পড়ার আশঙ্কার মধ্যে গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের জীবনরক্ষাকারী খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা কার্যক্রম এর আওতায় পড়বে না। সে কারণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে গতকাল সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা এদিন বিকালে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলী সংক্রান্ত উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে এই ছাড়ের বিষয়ে অবহিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে খবর আসার আগে রোহিঙ্গাদের অর্থায়নের বিষয়ে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা একটা নতুন বাস্তবতায় তো আসছি, এটাতো আমাদের কোনো সন্দেহ থাকা উচিত না। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট এসেছেন। তার যে নীতিমালা সেগুলো যে আগের থেকে ভিন্ন, এটাতো সর্বজনবিদিত। কাজেই, আমাদের দেখতে হবে যে, আসলে শেষ অবধি কি দাঁড়ায় এবং যে কোনো পরিস্থিতি যখন সৃষ্টি হবে তখন সেটার কার্যপ্রণালী আমাদেরকে বের করতে হবে, কীভাবে আমাদের স্বার্থরক্ষা করতে হবে।