অবৈধ অভিবাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের নিজ দেশ ছাড়া তৃতীয় কোনও দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করতে ট্রাম্প প্রশাসনের পথ খুলে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ৬–৩ ভোটে দেওয়া রায়ে সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের একটি আদেশ উল্টে দিয়েছে। সেই আদেশে বলা হয়েছিল, অভিবাসীদেরকে তৃতীয় দেশে পাঠালে তারা সেখানে কী ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে সেকথা বলার যথার্থ সুযোগ দিতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে। বোস্টনভিত্তিক ডিস্ট্রিক্ট জাজ ব্রায়ান মারফি গত ১৮ এপ্রিল ওই আদেশ জারি করে ট্রাম্পের অভিবাসী বিতাড়ন প্রক্রিয়া দ্রুত করার পরিকল্পনা আটকে দিয়েছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্প প্রশাসন এ আদেশই তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল। তৃতীয় দেশে অবৈধ অভিবাসী পাঠানোর বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি ছিল, অপরাধে জড়িতদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই অভিবাসীদেরকে তাদের নিজ দেশও ফেরত নিতে চায় না।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়ে সিদ্ধান্তের পক্ষে কোনও যুক্তি দেখানো হয়নি। সাধারণত জরুরি কোনও অনুরোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর সময় আদালত এমন করে থাকে। আদালতের রক্ষণশীল ৬ বিচারপতি ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে রায় দেন, আর তিন উদারপন্থি বিচারপতি ছিলেন বিপক্ষে। এই তিন বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আদালতের ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার আখ্যা দিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র ট্রিশিয়া ম্যাকলাফলিন বলেন, এই রায় দেশের জনগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য এক বিজয়। বিতাড়ন কর্মসূচি নব উদ্যমে শুরু হোক।
ট্রাম্পের এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছিল আট অভিবাসীর পক্ষ থেকে, যাদের মধ্যে মিয়ানমার, দক্ষিণ সুদান, কিউবা, মেক্সিকো, লাওস ও ভিয়েতনামের নাগরিক রয়েছেন। গত মে মাসে তাদের একটি বিমানে তুলে দক্ষিণ সুদানে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওই সময় প্রশাসনের বক্তব্য ছিল, এসব অভিবাসী মারাত্মক অপরাধে জড়িত ছিলেন যেমন হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও সশস্ত্র ডাকাতি। তবে অভিবাসীদের আইনজীবীদের দাবি, অনেকের বিরুদ্ধেই কোনও অপরাধের প্রমাণ নেই।
এবার সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে রায় দেওয়ায় একে ভয়ানক আখ্যা দিয়েছে অভিবাসনবিষয়ক আইনি সংস্থা ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন লিটিগেশন অ্যালায়েন্স। তাদের নির্বাহী পরিচালক ট্রিনা রেয়ালমুটো বলেন, এই সিদ্ধান্ত আমাদের মক্কেলদের নির্যাতন ও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় ট্রাম্পের অভিবাসননীতি নিয়ে সাম্প্রতিক আরেকটি বড় জয়। গত মাসেও সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনকে ভেনেজুয়েলার ৩ লাখ ৫০ হাজার অভিবাসীকে দেওয়া অস্থায়ী সুরক্ষা প্রত্যাহারের অনুমতি দিয়েছিল। এরপর আরও এক রায়ে হুতি, কিউবা, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলার প্রায় পাঁচ লাখ অভিবাসীর ওপর মানবিক কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করার পক্ষে রায় দেয় আদালত।