নগরীর আইন–শৃঙ্খলার বিরাজমান পরিস্থিতিতে ট্রাফিক পুলিশের প্রায় তিনশ’ অফিসারকে রিভলবার সরবরাহ এবং সার্বক্ষণিক সাথে রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের নগরীতে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষা এবং নগরবাসীর জীবন রক্ষায় এসব অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অবশ্য সিএমপি বলেছে, কোনো পরিস্থিতিতে নয়, অস্ত্র পুলিশের ইউনিফর্মের অংশ। তাই এসব অস্ত্র বহন ও ব্যবহারের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ট্রাফিক বিভাগের চারটি জোন রয়েছে। একজন এডিশনাল কমিশনারের নেতৃত্বে চারজন উপ–পুলিশ কমিশনার উপরোক্ত চারটি ট্রাফিক বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন। সিএমপির ট্রাফিক বিভাগে সর্বমোট ২৯ জন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) এবং ২২৭ জন সার্জেন্ট রয়েছেন। টিআই এবং সার্জেন্টদের কখনো রিভলবার ব্যবহার করতে দেখা যেতো না। কিন্তু সম্প্রতি তাদের সবার কোমরেই রিভলবার শোভা পাচ্ছে। সিএমপি কর্তৃপক্ষ এসব অস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে একাধিক ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড় ও সংবেদনশীল এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক কর্মকর্তারা যাতে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন এবং তাদের চোখের সামনে সংঘটিত যে কোনো ধরনের অপরাধ এবং নগরবাসীর জীবন রক্ষা করতে পারেন সেজন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সিএমপি কর্তৃপক্ষ এসব অস্ত্র সরবরাহ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে। যাতে বলা হয়েছে যে, টিআই ও সার্জেন্টরা দায়িত্ব পালনকালে নিয়ম অনুযায়ী রিভলভার বহন করবেন এবং শুধুমাত্র জরুরি পরিস্থিতিতে নিজের বা অন্যের প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দিলে এসব অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি থাকবে। তবে অস্ত্র ব্যবহারের প্রতিটি ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং পরবর্তীতে বিভাগীয় রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ট্রাফিক বিভাগ এখন আর শুধু যানবাহন নিয়ন্ত্রণেই সীমাবদ্ধ নয়; বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ, এমনকি সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিহত করতেও তাদের ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়। তাই আত্মরক্ষা এবং অপরের জীবন রক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাফিক অফিসারদের মনোবল ও কার্যক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দায়িত্বরত একাধিক টিআই এবং সার্জেন্ট বলেছেন, প্রচলিত আইন মেনেই এসব অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার আইন মেনেই ট্রাফিক সার্জেন্ট এবং টিআইদের অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
তারা বলেন, আমরা অস্ত্র ব্যবহার করতে পারি। এটা আমাদের চাকরিরই অংশ। এসব অস্ত্র পরিচালনার পর্যাপ্ত ট্রেনিংও আমাদের রয়েছে। তবে আগে এসব অস্ত্র আমাদের দেয়া হতো না, আমরাও ব্যবহার করতাম না। যানবাহনের শৃংখলা রক্ষার কাজে অস্ত্র খুব বেশি জরুরিও নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিরাজিত পরিস্থিতির কারণেই আড়াই কেজি ওজনের অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে আমাদের মনোবল বেড়েছে বলেও তারা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, আগে আমাদের চোখের সামনে কোনো অঘটন ঘটলে আমরা খালি হাতে কিংবা বড় জোর একটি লাঠি নিয়ে তা মোকাবেলার চেষ্টা করতাম। এখন আমরা অস্ত্র নিয়েই যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লড়তে পারবো। অবশ্যই অস্ত্র ব্যবহারের পর আমাদেরকে বিষয়টির যৌক্তিকতা এবং গুরুত্ব ব্যাখা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
এই ব্যাপারে সিএমপির এডিশনাল কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ আসফিকুজ্জামান আকতার বলেন, ট্রাফিক পুলিশের অফিসারদের অস্ত্র বহন নতুন নয়; এটি তাদের ইউনিফর্মেরই অংশ। বিশ্বের উন্নত অনুন্নত বহু দেশেই ট্রাফিক অফিসারেরা অস্ত্র বহন করেন এবং জরুরি মুহূর্তে ব্যবহার করেন। চট্টগ্রামের ট্রাফিক অফিসারেরাও একইভাবে অস্ত্র বহন করছেন। এটি বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।












