চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে ডাম্পট্রাক যোগে মাটি পরিবহনের সময় ঝরে পড়ে বিটুমিনের উপর সৃষ্টি হয়েছে মাটির প্রলেপ। এতে লবণবাহী গাড়ি থেকে নিঃসৃত পানি ও কুয়াশা মিশে পিচ্ছিল হয়ে উঠছে সড়ক। এর উপর দিয়ে প্রতিদিন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা।
জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমির টপসয়েল ও পাহাড়–টিলা কেটে ওইসব মাটি ইটভাটা এবং নিচু জায়গা ভরাট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব মাটি ডাম্পট্রাক যোগে মহাসড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়ক হয়ে বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন করা হয়। পরিবহনের সময় ডাম্পট্রাক থেকে ঝরে পড়া মাটিতেই মহাসড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কে সৃষ্টি হয়েছে মাটির প্রলেপ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, কৃষিবিভাগ, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব দেখভাল করার কথা। কিন্তু তাদের রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাটি খেকোরা। প্রতিদিনই দিন ও রাতে সমানতালে এক্সেভেটর দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল ও পাহাড়–টিলা কাটা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সাবাড় হবে পাহাড়–টিলা, কৃষিজমি হারাবে উর্বর শক্তি। মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্যের লাগাম ধরতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলা সীমানার একাধিক স্থানে বিটুমিনের উপর মাটির স্তর সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও বেশি, আবার কোথাও কম। রাতে কুয়াশা ও লবণবাহী গাড়ি নিঃসৃত পানির সাথে মাটির প্রলেপে মিশে পিচ্ছিল হচ্ছে মহাসড়ক। এতে ঘটছে ছোট–বড় দুর্ঘটনা। এছাড়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কেও ডাম্পট্রাক থেকে ঝরে পড়া মাটির প্রলেপ দেখা গেছে। বৃষ্টি হলেই ওসব সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়বে। দুর্ভোগে পড়বেন যাতায়াতকারীরা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে মাটি খেকোরা দিনে নীরব থাকলেও রাত বাড়ার সাথে সাথে সরব হয়ে উঠে। রাতে বেপয়োরা গতিতে মাটিবাহী ডাম্পট্রাক চলাচলের শব্দে লোকালয়ের মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। মাটি খেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ব্যাপারে মুখ খুলতে কেউ সাহস পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মোটরসাইকেল আরোহী আসিফুর রহমান জানান, মহাসড়কের উপর মাটির প্রলেপ পড়ে অনেক স্থানে পিচঢালা সড়ক নাকি মাটির সড়ক বুঝাই মুশকিল। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত মহাসড়ক খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ লবণবাহী গাড়ি থেকে নিঃসৃত পানির সাথে মাটি মিশে পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে মহাসড়ক। যার ফলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটনার আশংকা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ–সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ জানান, এই ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি। আমরা সড়ক উন্নয়নে কাজ করি। মহাসড়কে কোনো ধরনের গাড়ি চলাচল করবে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখভাল করেন।
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কাজী শফিউল ইসলাম জানান, আবাদি জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির প্রথম দুই ফুটের মধ্যে। এই অংশেই ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে এবং এই অংশ থেকেই প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করেন। কিন্তু সেই উপরের মাটি কেটে নিলে মৃত্তিকা (মাটি) প্রাণ হারায় আর জমি হারায় তার উর্বরতা। ফলে কয়েক বছর পর্যন্ত জমিতে কাঙ্ক্ষিত ফসল ফলে না। এতে কৃষকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়। আর খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি বিপন্ন হবে পরিবেশ। এই ব্যাপারে কৃষকদের সচেতন করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খান মুহাম্মদ এরফান জানান, মহাসড়কে গাড়ি থেকে ঝরে পড়ে মাটির প্রলেপ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান জানান, কৃষি জমির টপসয়েল কাটা অপরাধ। যারা কৃষিজমির টপসয়েল কেটে অন্যত্র পরিবহনের সময় সড়কের ক্ষতি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।