চন্দনাইশে সিএনজি টেক্সির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হলেন চালক। তার নাম মো. আবদুস সবুর (৩০)। গতকাল সোমবার বিকেল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের গাছবাড়িয়া কলঘরস্থ বরগুনী ব্রিজ এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সিএনজি টেক্সিচালক আবদুস সবুর চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া কলেজ গেট থেকে যাত্রী নিয়ে কেরানীহাটের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে বরগুনি ব্রিজ (মাজার পয়েন্ট) সেতু পার হয়ে কলঘর নামক স্থানে পৌঁছলে দোহাজারী ট্রাফিক বক্সের কয়েকজন পুলিশ সদস্য সিএনজিটিকে থামানোর জন্য সিগন্যাল দেয়ার সাথে সাথে চালক উল্টো দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পেছন পেছন আসা বালু বোঝাই একটি দ্রুতগতির ট্রাক সিএনজিটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই সিএনজি চালিত টেক্সিটিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় সিএনজি চালক আবদুস সবুর সিএনজিতেই পুড়ে অঙ্গার হয়। খবর পেয়ে চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। নিহত সিএনজি টেক্সি চালক আবদুস সবুর সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে।
সিএনজি টেক্সি, ব্যাটারি রিকসা থেকে ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের অব্যাহত চাঁদাবাজির কারণেই একটি তরতাজা প্রাণ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়ার অভিযোগ করেন স্থানীয় জনতা। মর্মান্তিক এ ঘটনার পর স্থানীয় জনগণ চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে গাছের টুকরো ফেলে ব্যারিকেড দিলে প্রায় ১ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ ওবাইদুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ এসে আন্দোলনরত জনতার সাথে কথা বলে ব্যারিকেড তুলে নিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সাইফুল নামে এক পথচারী জানান, সিএনজি টেক্সিটি বরগুনি ব্রিজ পাওয়ার সাথে সাথে কয়েকজন পুলিশ সদস্য সামনে দাঁড়ায়। এ সময় সিএনজি চালক পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য তার সিএনজি টেক্সিটিকে দ্রুত ঘুরিয়ে উল্টে দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। এ সময় পেছনে থাকা বালু বোঝাই ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগে। এ সময় সিএনজি ড্রাইভোরের পা গাড়ির সাথে আটকে যায়। গাড়িতে থাকা তিনজন মহিলা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যেতে পারলেও চালক নামতে পারেননি। সাথে সাথে সিএনজিটিতে আগুন ধরে মুহূর্তেই চালকসহ গাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সহযোগিতায় পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে চন্দনাইশ থানায় নিয়ে যায়।
খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) মো. সোহানুর রহমান সোহাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম বিকেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহতের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে সরকারিভাবে আরো সহযোগিতার আশ্বাস দেন। নিহত আবদুস সবুরের স্ত্রী, ৫ বছরের এক পুত্র সন্তান ও দেড় বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা আরো অভিযোগ করেন, বেশকিছুদিন ধরে দোহাজারী ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বরগুনি ব্রিজ এলাকার কলঘর নামক স্থানে এবং দোহাজারী হাইওয়ে থানার পুলিশ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে মহাসড়কে চলাচলরত সিএনজি টেক্সি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকসা আটকিয়ে বিভিন্ন উপায়ে চাঁদাবাজি করে আসছিল। সিএনজি টেক্সি আটকালেই নগদ টাকা দিতে না পারলে ৫/১০ হাজার টাকার মামলা দিয়ে দেন। এ ভয়ে সিএনজি চালকরা পুলিশ দেখলেই পালাতে চেষ্টা করে। দোহাজারী পৌরসদর এলাকা ছেড়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ১০ কিলোমিটার দূরে বরগুনি ব্রিজ এলাকায় গিয়ে গাড়ি চেকিং করার বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ খান মোহাম্মদ এরফান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। নিহত চালক ও সিএনজি টেক্সিটি চন্দনাইশ থানায় রয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত খবরাখবর নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।