দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য পরিচিত ফ্রান্সের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের ছোট শহর দ্যুলফি এবার হয়ে উঠল আরেক মানবিক বার্তার বাহক। ট্যুর ডি ফ্রান্সের সময় সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি বিরল প্রো–প্যালেস্টাইন বিক্ষোভ। গাজার পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত বুধবার বিশ্ববিখ্যাত সাইকেল রেস ‘ট্যুর ডি ফ্রান্স’এর মূল দল (প্যালোটন) শহরের মধ্যে প্রবেশ করলে দ্যুলফির রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বিক্ষোভকারীরা ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠেন। হাতে ছিল ফিলিস্তিনি পতাকা, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। একটি বাড়ির দেয়ালজুড়ে টাঙানো ছিল বিশাল ফিলিস্তিনি পতাকা। আর একটি ব্যানারে লেখা ছিল ‘ক্ষুধার্ত রাখা মানেই হত্যা করা’। গাজায় খাদ্য সহায়তার নামে যে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে এটি সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ভানেসা হুগ্যোন্যাঁ জানান, এই বিক্ষোভ কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল রেসের আন্তর্জাতিক দৃশ্যমানতাকে কাজে লাগিয়ে গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বার্তা পৌঁছাতে। তিনি বলেন আমরা ইসরায়েল বা হামাসকে বদলাতে পারব না। কিন্তু অন্তত আমাদের সরকার যেন শুধু মুখে না বলে কিছু করে। এই বার্তা দিতে চেয়েছি।
মাত্র তিন হাজার জনসংখ্যার দ্যুলফি শহর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের আশ্রয় দিয়ে পরিচিত হয়েছিল ‘ন্যায়বিচারের শহর’ হিসেবে। হুগ্যোন্যাঁ বলেন আমার দাদু–দাদি যুদ্ধের সময় মানুষ লুকিয়ে রেখেছিলেন। আমাদের কাছে ন্যায়বিচার মানে সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করা্তজাতি বা ধর্ম যাই হোক না কেন। বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে ট্যুর ডি ফ্রান্সে এমন সরাসরি প্রতিবাদ সাধারণত দেখা যায় না। তবে গত বছরও রেসের প্রথম ধাপে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ছোট পরিসরে এক প্রতিবাদ হয়েছিল। একই দিন আরেকটি ঘটনার জন্ম দেয় ফ্রান্সের টুলুজ শহরে। এক ব্যক্তি ‘ইসরায়েল ট্যুর থেকে বের হয়ে যাও’ লেখা একটি টি–শার্ট পরে রেসের শেষ অংশে দৌড়ে ঢুকে পড়েন। মাথায় ছিল সাদা–কালো কেফিয়াহ। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। দ্যুলফির বিক্ষোভে এক ব্যক্তি মাইকে বলেন, ‘স্যিলভান অ্যাডামস, আপনি একটি গণহত্যাকারী সেনাবাহিনীর মুখপাত্র। গাজায় যুদ্ধ চলছে প্রায় দুই বছর ধরে। তবে গত অক্টোবরের ইসরায়েল–গাজা সংঘর্ষের পর সহিংসতা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ইসরায়েলি তথ্যমতে, হামাসের হামলায় নিহত হয় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি এবং অপহৃত হয় ২৫১ জন। পাল্টা অভিযানে গাজায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। এমনটাই জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।