সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক মান–সম্পন্ন ন্যাশনাল হেল্প লাইন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হেলপ লাইন নম্বর– ১৬৪৩০। এর ফলে সারা দেশের মানুষ যেকোনো প্রান্ত হতে টোল ফ্রি কল করে আইনি পরামর্শ গ্রহণ করতে পারছে এবং কোথায় গেলে আইনি সেবা পাবে এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাচ্ছে। অনলাইনে আইনি সহায়তা সেবা কার্যক্রম চালুর ফলে দূর–দুরান্তের বিচার প্রার্থী জনগণ ঘরে বসে সরকারি আইনি সহায়তার সুফল ভোগ করছে। গতকাল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমদ ভূঞা এ কথা বলেন। জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়– ‘স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ও সাবেক জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার রাজিয়া সুলতানা ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে আলোচনা সভার কার্যক্রম শুরু হয়। চট্টগ্রামের ন্যায় সারাদেশেও একই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে এ দিবস উদযাপন হয়েছে। সকালে ফেস্টুন, বেলুন ও শান্তির পায়রা উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমদ ভূঞা। পরে আদালত চত্ত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি চট্টগ্রাম আদালত ভবন হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। র্যালি শেষে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামের নীচ তলায় পার্কি হলে দিনব্যাপী লিগ্যাল এইড ফেয়ার, পার্কভিউ হসপিটাল চট্টগ্রামের সৌজন্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, ন্যায়কুঞ্জে এভারকেয়ার হসপিটালের সৌজন্যে ফ্রি–মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করা হয়। এসময় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (সিনিয়র জেলা জজ) মুরাদ–এ মওলা সোহেল, নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহসহ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমদ ভূঞা বলেন, সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন জনসচেতনতা এবং ব্যাপক প্রচার–প্রচারণা ও জনমত সৃষ্টি। এখনও এদেশের জনগণের একটি অংশ দরিদ্র ও নিরক্ষর। এই দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগণ তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে ততটা সচেতন নয়। এসব মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হলে অথবা কোনো আইনি জটিলতায় পতিত হলে আর্থিক দৈন্যতা কিংবা সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা আইন আদালতের আশ্রয় নিতে পারে না। এভাবে নানাবিধ আর্থ–সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা দারিদ্রতা বা অপ্রাচুর্যের কারণে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ন্যায় বিচারে প্রবেশাধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য দেশের আপামর জনসাধারণের আইনি অধিকার নিশ্চিত করার সাথে সাথে তাদেরকে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে সরকার প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালন করছে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইনি সহায়তা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সহিদুল ইসলাম। সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিস চট্টগ্রামের কার্যক্রমের উপর বিশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল। সভায় বিশেষ অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (সিনিয়র জেলা জজ) মুরাদ–এ মওলা সোহেল, নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম, জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, সরকারি কৌঁসুলী নজমুল আহসান খান, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, চসিক কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর জেনমিন পারভীন জেসি, সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম ও প্রত্যাশীর প্রধান নির্বাহী মনোয়ারা বেগম। উপস্থিত লিগ্যাল এইড উপকারভোগীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এডিআর উপকারভোগী মো. কামাল উদ্দিন। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন প্রতিনিধি, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, জেলা বারের আইনজীবী, ডিল্যাক প্যানেল আইনজীবী, এনজিও প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। আলোচনা সভা শেষে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, চট্টগ্রামের ২০২৩ সালের কর্মদক্ষতা বিবেচনায় এডভোকেট বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীকে জেলার শ্রেষ্ঠ প্যানেল আইনজীবী সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সভায় যুগ্ম জেলা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীন প্রযোজিত লিগ্যাল এইড এডিআর’র উপর নির্মিত একটি নাটক প্রদর্শন
করা হয়। এছাড়াও দিবস উপলক্ষ্যে জেলা আইনজীবী সমিতি অডিটরিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।