নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল এবং কন্টেনার ট্রেইলর নিষিদ্ধ করে টোল আদায়ের অনুমোদন দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তবে সিএনজি অটোরিকশাকে এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী দিনকয়েকের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু করা হবে। নতুনভাবে অনুমোদিত টোলে আগের প্রস্তাবের চেয়ে গাড়ি ভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমানো হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বন্দরনগরীর স্থবির হয়ে যাওয়া যান চলাচলে গতিশীলতা আনাসহ নানামুখী লক্ষ্যকে সামনে রেখে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৪ হাজার ২শ’ ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার–পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ বেশ আগে শেষ হয়েছে। লালখান বাজার থেকে উঠার র্যাম্পের কাজ শেষ। জিইসি মোড় থেকে উঠার র্যাম্পের কাজ চলছে। শেষ হয়েছে টাইগারপাসে নামার র্যাম্পও। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আংশিক চালু করা হয়েছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) টোল আদায়ের মাধ্যমে যান চলাচল শুরু করার কথা বললেও গত বেশ কিছুদিন ধরে টোল ছাড়াই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল করছে। সিডিএ ইতোপূর্বে একটি টোল হার নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সিডিএতে নতুন চেয়ারম্যান পদায়ন করা হয়। নিয়োগ দেয়া হয় নতুন বোর্ডও। নয়া চেয়ারম্যান এক্সপ্রেসওয়ের টোল কমানোর আগ্রহ প্রকাশ করলে সিডিএ নতুন করে একটি টোল হার নির্ধারণ করে গত ৩ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। গত ২৭ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সিডিএর প্রস্তাবিত টোল হার অনুমোদন দিয়েছে। এতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল এবং কন্টেনার মুভার চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সিএনজি টেক্সি চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী দিন কয়েকের মধ্যে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল করতে টোল আদায় শুরু করবে সিডিএ।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচলের সুযোগ রেখে নয়া টোল হার অনুমোদন করেছে মন্ত্রণালয়। এতে জিইসি, সিআরবি, আগ্রাবাদ থেকে ফ্লাইওভারে ওঠে সিইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, কেইপিজেড, সী বিচে নামা সিএনজি টেক্সির জন্য ৩০ টাকা, কারের জন্য ৮০ টাকা, জিপ এবং মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যান ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সী বিচ, কেইপিজেড, সিইপিজেড থেকে ওঠে নিমতলা, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস এবং লালখান বাজারে নামার জন্য সিএনজি টেক্সির জন্য ৩০ টাকা, কারের জন্য ৮০ টাকা, জিপ এবং মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০ টাকা এবং কাভার্ডভ্যান ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জিইসি এবং টাইগারপাস থেকে ওঠে আগ্রাবাদ, ফকিরহাটে নামা আবার নিমতলা, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড থেকে ওঠে লালখান বাজার ও টাইগারপাসে নামার গাড়িসমূহের জন্য সিএনজি টেক্সির জন্য ২০ টাকা, কারের জন্য ৫০ টাকা, জিপ ৭০ টাকা, মাইক্রোবাস ৯০ টাকা, পিকআপ ১৩০ টাকা, মিনিবাস ১৮০ টাকা, বাস ২৫০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশে ট্রাক (ছয় চাকা) এবং কাভার্ড ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত টোল প্রস্তাবে মোটর সাইকেল এবং ট্রেইলরের নামোল্লেখ করে চলাচল নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রথম দফার প্রস্তাবে কার, জিপ ও মাইক্রোবাসের জন্য ১০০ টাকা, পিকআপের জন্য ১৫০ টাকা, মিনিবাসের জন্য ২০০ টাকা, বাসের জন্য ৩০০ টাকা, চার চাকার ট্রাকের জন্য ২০০ টাকা, ছয় চাকার ট্রাকের জন্য ৩০০ টাকা এবং কাভার্ডভ্যানের জন্য ৪৫০ টাকা টোল হার নির্ধারণ করে অনুমোদন দিয়েছিল।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার পর জিইসি মোড় থেকে ওঠে পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে নামার সুযোগ থাকবে। আবার পতেঙ্গা থেকে ওঠে নগরের টাইগারপাস, লালখান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে নামার জন্য র্যাম্প রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, নিমতলায়, কেইপিজেড, ফকিরহাট, সিইপিজেডে ওঠানামার নয়টি র্যাম্প থাকবে।
টোলের হারের ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, নতুন টোল হার মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমরা অচিরেই টোল আদায় কার্যক্রম শুরু করবো। এর ফলে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচলে শৃক্সখলা আসবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল ও ট্রেইলর চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপ–সচিব মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল স্বাক্ষরিত অনুমোদনপত্রে বলা হয় যে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ্–আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং টোল আদায়ের মাধ্যমে জিওবি (সরকারের) ঋণের টাকা পরিশোধের বিষয় থাকায় টোল আদায়ের অনুমোদন দেয়া হলো। মোটরসাইকেল ও ট্রেইলার কারিগরী বিবেচনায় উঠানামায় নিষেধ করা হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।