২০১৬ অলিম্পিকে জিমনেস্টিক্সে চারটি সোনার পদক জিতেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্ট সিমোন বাইলস। কিন্তু গত অলিম্পিকে জাপানে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন সেই বাইলস। টোকিওতে সেবার দলগত ইভেন্টে রুপা ও ব্যালান্স বিমে ব্রোঞ্জ পদক জয়ের পর এক পর্যায়ে আসর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি মানসিক অবসাদের কারণে। ‘টুইস্টিজ’ নামে একটি মানসিক অবস্থায় ছিলেন তখন তিনি। যেটির কারণে জিমন্যাস্টদের উঁচুতে থাকা বা বাতাসে ভেসে থাকার সময় স্থানিক মনোযোগ সরে যায় কিছুক্ষণের জন্য।
সেবার তার পারফরম্যান্সের অবনতি ও শেষ পর্যন্ত দুঃখজনক বিদায় ছিল অলিম্পিকের আলোচিত ঘটনা। এরপর দুই বছর তিনি খেলার বাইরে ছিলেন। চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। মানসিকভাবে চনমনে ও ফুরফুরে হয়ে তীব্র তাড়না নিয়ে আবার তিনি ফিরেন জিমন্যাস্টিকসে। অলিম্পিকেও আসেন দেশের আশা হয়ে আর নিজেকে আবার সেরা প্রমাণ করার তাগিদ নিয়ে।
আর তাতেই সফল এই মার্কিন জিমনেস্ট। এবারের আসরে সিমোন বাইলসের পারফরম্যান্সেই ছিল আগের আসরের দুঃস্বপ্নকে মাটিচাপা দেওয়ার প্রত্যয়। তার হাসি, তার উচ্ছ্বাস, উদযাপন আর প্রতিক্রিয়ায় মিশে থাকল উপভোগের প্রতিচ্ছবি। সতীর্থ ও প্রিয় বন্ধু জর্ডান চাইলসের সঙ্গে সাইডলাইনে নাচতে শুরু করলেন এক পর্যায়ে। সব কিছুতেই ফুটে উঠল সর্বকালের সেরা জিমন্যাস্টদের একজন আবার উদ্ভাসিত আপন আলোয়। টোকিওর যন্ত্রণাময় অধ্যায় পেছনে ফেলার শুরুটা দারুণ করেন বাইলস। প্যারিস অলিম্পিকের দলগত জিমন্যাস্টিকসের ফাইনালে তার ও সতীর্থদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সোনা জিতল যুক্তরাষ্ট্র। রুপা জয়ী ইতালি প্রায় ছয় পয়েন্ট পেছনে ছিল আমেরিকানদের থেকে। ব্রোঞ্জ জয় করে ব্রাজিল। প্রাপ্তিটা তাদেরও কম নয়। সেই ১৯২৮ আসরের পর দলগত কোনো পদক পেল ইতালি। ব্রাজিলতো দলগত পদক পেল প্রথমবার। সংবাদমাধ্যমে তুমুল আলোচনায় এটিকে বলা হচ্ছে তার ‘রিডেম্পশন ট্যুর।’ মুক্তির চেষ্টা হোক বা শাপমোচন, কিংবা যে কোনো কিছুই। তবে শুরুটা দারুণ করলেন বাইলস। টোকিও অলিম্পিকে এই দলগত ইভেন্টেই ভল্টে হিশেহারা হয়ে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন বাইলস। এবার এখানেই আবার দুঃসহ স্মৃতি ফিরে আসে কি না এই শঙ্কা ছিলই। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে তিনি নিখুঁতভাবে উতরে যান এই পর্ব। শঙ্কা যে কিছু তার নিজের মনের কোণেও ছিল, তা অস্বীকার করলেন না বাইলস। ২৭ বছর বয়সী জিমন্যাস্টের স্বস্তিও তাই বেশি।
তিনি বলেন, সকালে থেরাপি নিয়ে দিন শুরু করেছি। সত্যিই খুবই শান্ত ছিলাম এবং অনুভব করছিলাম যে আমি তৈরি। ভল্টে ল্যান্ড করার পর মনে হচ্ছিল আমরা অবশ্যই জিততে যাচ্ছি। ভল্ট শেষ করার পর স্বস্তি পাচ্ছিলাম যে, কোনো স্মৃতি বা অন্য কোন কিছু ফিরে আসেনি। সব মিলিয়ে দারুণ রোমাঞ্চকর ছিল সবকিছু। আমরা মজা করেছি। পরস্পরের সঙ্গে সময়টা উপভোগ করেছি এবং জিমন্যাস্টিকস করেছি। এই নিয়ে অলিম্পিকে পাঁচটি সোনা জেতা হয়ে গেল বাইলসের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেতো অবিশ্বাস্যভাবে ২৩টি সোনা জয়ের কীর্তি তার আছে। অলিম্পিক ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ মিলিয়ে তার মোট পদক এখন ৩৮টি। সর্বকালের সফলতম জিমন্যাস্ট তিনিই। বাইলসকে পুরোনো চেহারায় ফিরতে দেখে উচ্ছ্বসিত তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সতীর্থ জর্ডান চাইলস। নিশ্চিতভাবেই এখন বলতে পারেন যে, টোকিওর আসর থেকে ভিন্ন একজন এখন সে। আমি সবসময় বলতে ভালোবাসি যে, সর্বকালের সেরাদের সেরার সঙ্গে অনুশীলন করি আমি। যা কিছুই হোক না কেন, সে সবসময়ই আমার হৃদয়ে আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে।