টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বললেন সাকিব

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

বলা হচ্ছে এই মুহূর্তে সাকিব আল হাসানের ওপর রাজ্যের চাপ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে গেছে এমপি পদ। এরপর হয়েছেন খুনের মামলার আসামি। একদিন আগে শেয়ার বাজার কারসাজির জন্য করা হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা। আর সে চাপ নিয়ে খেলে যাচ্ছেন দেশের হয়ে। তাইতো গতকাল কানপুরে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেই ফেললেন কিভাবে যে নিজের উপর ফোকাস রাখছি সেটা আল্লাহই জানেন। আসলে এই অবস্থায় ক্রিকেট খেলাতো দূরের কথা স্বস্তিতেও থাকা সম্ভব নয়। যদিও চারদিক থেকে সাহস যোগানো হচ্ছে সাকিবকে। তাই চাপ কমাতেই কিনা এবারের টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের হয়ে শেষ টিটোয়েন্টি ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন বলে জানিয়েছেন সাকিব আল হাসান। তার মানে টিটোয়েন্টি অধ্যায় এখন শেষ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগামী মাসের সিরিজ দিয়ে তিনি ইতি টানবেন টেস্ট ক্যারিয়ারের। যদি খেলার সুযোগ পান তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট হবে সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। সে সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গৌরবময় এক অধ্যায় তাই এখন শেষের কাছে। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগের দিন কানপুরে গতকাল এই ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটার। তবে ওয়ানডে ক্রিকেট তিনি এখনই ছাড়ছেন না।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিমার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত এই সংস্করণে খেলতে চান এই অলরাউন্ডার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশের মাঠে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সাকিবের খেলা নিয়ে অবশ্য কিছু জটিলতা আছে। দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর মাসখানেক আগে তার বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলা হয়েছে সেখানে আসামির তালিকায় ২৮ নম্বরে আছে সাকিবের নাম। যদিও মামলাটি হওয়ার সময় সাকিব ছিলেন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে। ওই সফরের পর তিনি আর দেশে ফিরেনি। পাকিস্তান থেকে ইংল্যান্ডে যান তিনি কাউন্টি ক্রিকেটে খেলতে। সেখান থেকেই সরাসরি চলে যান ভারত সফরে। হত্যা মামলা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরা ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে ফেরা নিয়ে সাকিবের নিজেরও কিছুটা শঙ্কা আছে। যদিও বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। সাকিব বলেন এখন পর্যন্ত আমি তো আছি দলের সাথে। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে আমার কি পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে ।

সাকিব জানান, ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন কিভাবে সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়। সাকিব বলেছেন দেশে ফেরা ও সিরিজ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে নির্বিঘ্নে ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা তিনি চেয়েছেন। মাঠের বাইরে দুঃসময়ের মধ্যে থাকা সাকিব মাঠের ভেতরও হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে। পাকিস্তান সফরে বোলিংয়ে মোটামুটি পারফর্ম করতে পারলেও ব্যাট হাতে ছিলেন সাদামাটা। ভারতের প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে একটু লড়াই করতে পারলেও বোলিংয়ে ছিলেন একদমই ধারহীন।

সব মিলিয়ে তার পারফম্যান্স সেরার ধারে কাছে নেই অনেক দিন ধরেই। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে চোখের সমস্যাও তাকে প্রবলভাবে ভোগাচ্ছে। যা বাজেভাবে প্রভাব ফেলছে তার ব্যাটিংয়ে। ২০০৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্টে অভিষিক্ত সাকিব এই সংস্করণে এখনও পর্যন্ত খেলেছেন ৭০ টেস্ট। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অসংখ্য রেকর্ড আর অর্জন তার সঙ্গী। দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে তিনি অবিসংবাদিত। বিশ্ব ক্রিকেটের পরিমন্ডলেও তার রেকর্ডের কমতি নেই। ২০১১ সালে প্রথমবার আইসিসি টেস্ট অলরাউন্ডারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠার পর তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাখেন এই জায়গা। তার টিটোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ হলো ১২৯ ম্যাচে। এখানেও লম্বা সময় ছিলেন অলরাউন্ডারদের র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে। ১৯ টেস্ট ও ৩৯ টিটোয়েন্টিতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপতেঙ্গায় ৬ ডাকাত আটক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধআমির হোসেন জামেয়া সুন্নিয়া মহিলা মাদ্রাসার নতুন চেয়ারম্যান