টেলিস্কোপে শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ দেখল শিক্ষার্থীরা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

টেলিস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে চলতি শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ উপভোগ করল চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনীর আওতায় শিক্ষার্থীদের এ চন্দ্রগ্রহণ উপভোগের সুযোগ করে দেয় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। নগরীর চট্টেশ্বরী সড়কের চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলের (সিজিএস) ১২ তলা ভবনের ছাদে এ আয়োজন করা হয়। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো টেলিস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে চন্দ্রগ্রহণ উপভোগ করে।
একই সাথে শনি-বৃহস্পতি, বুধ, নেপচুন, ইউরেনাসসহ অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণেরও সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। এসব গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত ধারণা দেন মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের একটি টিম। টিমের সদস্য হিসেবে জাদুঘরের কিউরেটর সুকল্যাণ বাছাড় ও সহকারী কিউরেটর মৌমিত হাসান সাথে ছিলেন। এ সময় সিজিএস স্কুলের (ন্যাশনাল কারিকুলাম) প্রধান শিক্ষক তহসিন খান, সহকারী প্রধান শিক্ষক ইশরাত জাহান, ইভেন্ট ম্যানেজার সাবরিনা আজম, প্রশাসনিক প্রধান ফয়সাল ওয়াহিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী এ চন্দ্রগ্রহণ উপভোগের সুযোগ পায়। তবে শিক্ষার্থীদের সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিভাবকও সাথে এসেছিলেন। বিকেল ৫টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ চলে। টেলিস্কোপের মাধ্যমে চন্দ্রগ্রহণ ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র দেখার সুযোগ পেয়ে যারপরণাই খুশি নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান। প্রতিক্রিয়ায় ফারহান জানায়, টেলিস্কোপের মাধ্যমে যখন দেখছিলাম, সবকিছু খুব কাছে মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, চাঁদটা বুঝি হাতে ধরা যাবে। তখন অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছিল। তাছাড়া অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে আমাদের খুব সহজ ও সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছিল। এ ধরনের আয়োজন ঘন ঘন হলে মহাকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে আরো বেশি করে জানার সুযোগ হবে বলেও জানায় ফারহান।
এ আয়োজন শিক্ষার্থীদের আরো বেশি বিজ্ঞান মনস্ক করে তুলতে সাহায্য করবে মন্তব্য করে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে টেলিস্কোপের সাহায্যে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ বা উপভোগের সুযোগ খুবই সীমিত। যার কারণে চট্টগ্রামে আমরা এ ধরনের ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনী আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি এবং আয়োজন করেছি। যেহেতু দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ উপলক্ষে শুক্রবার বিশেষ দিন ছিল, তাই আমরা এ দিনটি বেছে নিয়েছি। আমাদের এ আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, চন্দ্রগ্রহণের পাশাপাশি অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র এবং মহাকাশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের আরো বেশি জানার সুযোগ করে দেয়া। এসব বিষয় সম্পর্কে জানতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করা। ভবিষ্যতে এ ধরণের আরো প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে বলেও জানান জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের টিমের সদস্যরা জানিয়েছেন, ঢাকায় প্রায় সময় এ ধরণের আয়োজন করা হলেও চট্টগ্রামে সেটা হয়না। তবে ২০১৭ সালে এ ধরনের একটি আয়োজন করা হয়েছিল চট্টগ্রামে। এবার গতকাল (১৯ নভেম্বর) দ্বিতীয় বারের মতো এমন আয়োজনে শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ উপভোগের সুযোগ পেল চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫৮০ বছর পর গতকাল এমন দীর্ঘ মেয়াদে আংশিক চন্দ্রগ্রহণের দেখা পেল বিশ্ববাসী। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার মূল গ্রহণ উত্তর আমেরিকার দেশগুলো থেকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব এশিয়া, উত্তর ইউরোপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও তা দৃশ্যমান হয়। চাঁদ ও সূর্যের মাঝামাঝি একই সরলরেখায় পৃথিবী এলে চন্দ্রগ্রহণ হয়। তখন পৃথিবীর আড়ালে থাকায় সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না চাঁদে। গতকাল যেহেতু পৃথিবীর ছায়ায় চাঁদের ৯৭ শতাংশ ঢাকা পড়ে, তাই এটিকে আংশিক বা খণ্ড গ্রাস চন্দ্রগ্রহণ সংজ্ঞায়িত করা হয়। পুরোটা ঢাকা পড়লে বলা হতো পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ।
বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা ১৯ মিনিটে শুরু হয় আংশিক গ্রহণ, শেষ হয় ৪টা ৪৭ মিনিটে। তবে পিনার্মাল পর্যায়ের গ্রহণ চলে সন্ধ্যা ৬টা ৩ মিনিট পর্যন্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযে গাড়ি এখন কেবলই স্মৃতি
পরবর্তী নিবন্ধঢাবির হলে এক ছাত্রীকে আড়াই ঘণ্টা নাচতে বাধ্য করলেন সিনিয়ররা!