কক্সবাজারের টেকনাফে আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের উপজেলা আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস সিকদারের (৪২) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকাল আটটার দিকে বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে হ্নীলা ইউনিয়নের রঙিখালী এলাকার একটি সেতুর নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় মরদেহটি পাওয়া যায়। পরিবার অভিযোগ করেছে, আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের উপজেলা সদস্য সচিব ও হ্নীলার রঙিখালীর বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম সবুর মিয়া দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আটকের পর ইউনুস সিকদারকে হত্যা করেছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা দাবি করছেন, ইয়াবা বা টাকা লেনদেন সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরে মোহাম্মদ আলম সবুর মিয়া এই হত্যার ঘটনা ঘটাতে পারেন। নিহত ইউনুস সিকদার উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চান্দলীপাড়ার প্রয়াত মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে এবং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর জানান, রঙিখালী এলাকার একটি সেতুর নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় ইউনুস সিকদারের লাশ দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। পানি থেকে উদ্ধারের সময় নিহত ইউনুস সিকদারের পরনে পায়জামা পরা ছিল। শরীরের ওপরের অংশে কাপড় ছিল না; আঘাতের চিহ্ন আছে।
নিহতের স্ত্রী জানান, মঙ্গলবার বিকালে দাওয়াত দিয়ে ইউনুস সিকদারকে বাসায় ডেকে নিয়ে যায় তার কমিটিরই সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলম সবুর মিয়া। সেখানে টাকার লেনদেন নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রাত ১০টার দিকে স্ত্রীকে ফোন করে ইউনুস সিকদার জানায় তাকে আটকে রেখেছে সবুর মিয়া। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দলসহ সবুর মিয়ার বাড়িতে যান স্ত্রী ও পুত্র। কিন্তু পুলিশ দেখে ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে সবুর মিয়া ও তার লোকজন। এতে পিছু হটে পুলিশের দল চলে যায়। তারপরও স্ত্রী ও পুত্র সবুর মিয়ার বাড়িতে গেলে ইউনুছ সিকদারকে সকালে ছেড়ে দেবেন বলেন তাড়িয়ে দেন সবুর মিয়া। যদিও রাতে অভিযানের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন থানা ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর।
ইউনুস সিকদারের স্ত্রী বলেন, ‘ওই সময় সবুর মিয়া আমার স্বামী ইউনুস সিকদারের কাছে টাকা পান বলে জানান এবং আমাদের কাছে সেই পাওনা টাকা দাবি করেন। আমি বলেছি টাকা দেবো, আমার স্বামীকে ছেড়ে দেন। তখন সবুর মিয়া সকালে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানান। কিন্তু সকালে আমার স্বামীর লাশ পেলাম আমরা। আমার স্বামীকে সবুর মিয়া ও তার লোকজন হত্যা করেছে। আমি তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, টাকার লেনদেন নিয়ে ইউনুস সিকদারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। রঙিখালী এলাকাটি মাদক বেচাবিক্রি এবং ডাকাত–সন্ত্রাসীদের আস্তানা হিসেবে পরিচিত। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং এর নেপথ্যে থাকা লোকজনকে শনাক্তের কাজ চলছে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে প্রধান অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলম সবুর মিয়া। এছাড়া তার সাঙ্গপাঙ্গরাও পালিয়েছে। সবুর মিয়া একজন বড়মাপের চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি। তার সাথে দীর্ঘদিন থেকে নিহত ইউনুছ সিকদারের গভীর সখ্যতা ছিল।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রঙিখালী এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি জানান, মোহাম্মদ ইউনুছ প্রায়শই সবুর মিয়ার বাড়িতে আসা–যাওয়া করতেন। সবুর মিয়া, আবছার উদ্দিন, আনোয়ার হোসাইন ওরফে লেটাইয়্যা, মিজানুর রহমান ওরফে বাড়ু মিজানসহ কয়েকজন মিলে এলাকার দোকানে আড্ডাও দিতেন। গত কয়েকদিন ধরে ইয়াবা সংক্রান্ত টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এদের মধ্যে প্রকাশ্যে কথা কাটাকাটির ঘটনা শোনা গেছে। এ কারণে রাতে ইউনুছ সিকদার সাবরাং এলাকা থেকে রঙিখালীতে গিয়েছিলেন। এরপর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।










