কক্সবাজারের টেকনাফে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে পাহাড়ি এলাকায় বন্দি করে রাখা নারী ও শিশুসহ ২৫ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী।
এ সময় দুই মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক।
গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য এবং পূর্বে আটক হওয়া পাচারকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কিছুদিন ধরে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া সংলগ্ন গহিন পাহাড়ি এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র নারী ও শিশুসহ একদল মানুষকে আটকে রেখেছে। তাদের মালয়েশিয়া পাচারের প্রস্তুতি চলছিল।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর একটি যৌথ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে পাচারকারীদের গোপন আস্তানায় প্রবেশ করে ২৫ জন ভুক্তভোগীকে জীবিত উদ্ধার এবং দুই পাচারকারীকে আটক করা হয়। আটককৃতদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
অভিযান শেষে উদ্ধারকৃতদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়।
উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগীরা জানায়, কিছু পাচারকারী বিদেশে উন্নত জীবন, উচ্চ বেতনের চাকরি এবং অল্প খরচে মালয়েশিয়া পাঠানোর লোভ দেখিয়ে তাদের এই পথে নামায়। অনেকে আবার চাকরির আশায় নিজেদের সঞ্চিত অর্থ পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়েছে।
তারা আরও জানায়, পাচারকারীরা মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা থেকে সুযোগ মতো নৌকা বা ট্রলারে করে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যাত্রার আগে পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের পাহাড়ি গুহা ও ঘরে আটকে রেখে নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা চলছিল।
কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তা সিয়াম-উল-হক বলেন, “মানবপাচার একটি জঘন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের উপকূল ও সমুদ্র এলাকা থেকে মানবপাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম দমন ও প্রতিরোধে সর্বদা সচেষ্ট। উদ্ধারকৃত ভুক্তভোগী ও আটক পাচারকারীদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
তিনি আরও জানান, মানবপাচার প্রতিরোধে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ টহল জোরদার করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধ রাখা যায়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মানবাধিকার কর্মীরা জানান, বছরের শেষ প্রান্তে সমুদ্র তুলনামূলক শান্ত থাকায় অবৈধভাবে মালয়েশিয়া গমনের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এ সুযোগে কিছু দালালচক্র রোহিঙ্গা ও স্থানীয় দরিদ্র মানুষদের লক্ষ্য করে মানবপাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে।
        











