টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ বাড়িয়ে দেওয়া দরকার

| সোমবার , ২৬ জুলাই, ২০২১ at ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের অনেক মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশসহ ৫৭টি দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ বলেছে, মহামারিতে তাঁদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্বে প্রতি দুজনে একজনের আয় কমেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ বলছে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মানুষ চাকরি হারিয়েছে অথবা তাঁদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত, জিম্বাবুয়ে, ফিলিপাইন, কেনিয়া, এল সালভাদরের মতো দেশের মানুষও এই জরিপে অংশ নেন। তবে উন্নত ও উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। গ্যালাপ ১১৭টি দেশের তিন লাখ মানুষের ওপর এই জরিপ চালিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে গ্যালাপ জানায়, করোনা মহামারির কারণে তাঁদের মধ্যে অর্ধেক মানুষের আয় কমে গেছে।এই পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রায় ১৬০ কোটি মানুষের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে।
করোনায় এই যে বহু লোক কাজ হারালো, বহু লোক গরিব হলো, কিন্তু সরকারিভাবে নতুন গরিবদের স্বীকৃতি মিলছে বলে মনে হয় না। সরকারের অগ্রাধিকার কোন্‌ পর্যায়ে সে বিষয়ে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গত এক বছরে এ নিয়ে অনেক জরিপ হয়েছে। সব কটি জরিপেই দেখা গেছে, গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আড়াই কোটি, দুই কোটি কিংবা দেড় কোটি হোক, নতুন গরিবের সংখ্যা যে বেড়েছে, তা চারপাশে তাকালেই বুঝতে পারি। বহু লোক বেকার হয়েছে, অনেকের আয় কমেছে। কিন্তু এই নতুন গরিব মানুষেরা সরকারের স্বীকৃতি পায়নি। সমস্যার স্বীকৃতি না থাকলে সমাধানে যাবো কীভাবে? এর প্রতিফলন দেখা গেছে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা কর্মসূচিতে। নতুন বাজেটেও নতুন গরিবের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ ছিল না।
এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষগুলো করোনাকালে অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন। বলা যায়, লকডাউনের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোই বেশি বিপদে পড়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই কাজ হারিয়েছেন। ছোটখাটো অনেক ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা পথে বসেছেন। সরকারের কাছ থেকে এই অসহায় মানুষগুলোর যে সহায়তা পাওয়ার কথা, তার খুব সামান্যই হয়তো পেয়েছেন। সরকার যে লক্ষাধিক কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে, তার সিংহভাগই পেয়েছেন বড় উদ্যোক্তারা। নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার ৫টি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক আগে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই ঘোষণা এই শ্রেণির মানুষের মাঝে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ প্রণোদনা তাদের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছবে কিনা-তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
এদের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র পণ্য। বিভিন্ন স্থানে আমরা দেখতে পাই টিসিবির পণ্য বিক্রয়ের দীর্ঘ লাইন। কেননা, এটিই এখন বড় ভরসা। যাঁরা হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত; তাঁদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয়ই বড় সহায়তা বলে তাঁরা মনে করেন। করোনায় এ শ্রেণির মানুষরা কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। কেননা তাঁরা সহায়তার জন্য অন্যের কাছে হাত বাড়াতে পারেন না লোকলজ্জার ভয়ে। ক্রেতাদের অভিযোগ, যত মানুষ টিসিবির পণ্য কেনার জন্য ভিড় করছেন, তাঁদের সবাই কাঙ্ক্ষিত পণ্য পাচ্ছেন না। অথচ এসব পণ্য বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। এ বিষয়টা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য -যেমন চাল, আটা, ভোজ্যতেল, ডাল ইত্যাদি পণ্য যেন সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে ক্রয় করতে পারেন, তার দিকে সরকারের খেয়াল রাখা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া। লকডাউনের কারণে যাঁরা কাজ ও জীবিকা হারিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের ভরসা হয়ে উঠতে পারে এই টিসিবি। এছাড়া বাজার পরিস্থিতি যেন স্থিতিশীল থাকে, তার দিকেও নজর রাখতে হবে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর কষ্ট লাঘবে সরকারের পদক্ষেপ আরো বিস্তৃত ও বাস্তবমুখী করতে হবে। প্রয়োজনে দেশের অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে